লিভার রোগের লক্ষন ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক আজকে আমরা লিভার রোগের লক্ষন ও প্রতিকার  সম্পর্কে  আলোচনা করতে যাচ্ছি । আপনার মনে যদি লিভার রোগের লক্ষন ও প্রতিকার  সম্পর্কে কোনো কিছু জানতে চান তাহলে আজকে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি লিভার রোগের লক্ষন ও প্রতিকার  সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
লিভার রোগের লক্ষন ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন
অনেক রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে আমাদের মাঝে অনেকে । একেক রকম রোগ হয়ে থাকে একেক জনের । পরিপূর্ণভাবে সুস্থ নয় কেউই । দেহের মধ্যে বাসা বাঁধে সবারই কিছু না কিছু সমস্যা । যথাযথ চিকিৎসা নিতে পারে কেউ কেউ সেটা আগে থেকে শনাক্ত করতে পারলে । অনেকে বুঝতেই পারেনা তাদের দেহে রোগে সৃষ্টি হয়েছে  ।

ভূমিকা

অনেকে আছে রোগ থেকে সৃষ্ট লক্ষণ গুলোকে  অবহেলা করে । অনেক ভোগান্তিতে পড়তে হয় এতে করে তাদের পরবর্তীতে । লিভারের রোগ হল বিভিন্ন ধরনের রোগের মধ্যে অন্যতম রোগ । আমরা আতকে উঠি যার কথা শুনলে । আমাদের দেহের সবচেয়ে বড় গ্রন্থি লিভার।


আপনার শরীরের দ্বিতীয় বৃহত্তম অঙ্গ হলো লিভার । পাঁজরের খাঁচা ঠিক নিচে অবস্থিত আপনার পেটের ডান দিকে । আবার হজম করতে সাহায্য করে লিভার আপনার শরীরকে । বর্জ্য এবং বিষাক্ত পদার্থ দূর করে আর পুষ্টি শোষণ করে । শরীর থেকে পিত্ত নামক পদার্থের বাহিত হয় এই বিষাক্ত পদার্থগুলো ।

লিভার রোগ কি

লিভার কে প্রভাবিত এবং ক্ষতি করতে পারে লিভারের রোগ এমন একটি । আমাদের শরীরের দ্বিতীয় বৃহত্তম অঙ্গ হলো লিভার ত্বকের পর । পাঁজরের খাঁচার নিচে অবস্থিত পেটি পেটের ডান দিকে । একটি পদার্থ তৈরি করে লিভার পিত্ত নামে যা খাদ্য হজমে সাহায্য করে তাছাড়া শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ বের করে দেয়। 

রক্ত পরিবহনে সাহায্য করে লিভার শরীরের অন্যান্য অংশে । তবে এটি স্বাস্থ্যকর যদি লিভার এই কাজগুলি ভালোভাবে সম্পাদন করে । লিভারের কিছু সমস্যা হতে পারে এসব কাজে কোন ব্যাঘাত ঘটলে । তাৎক্ষণিকভাবে দেখা যায় না লিভারের রোগের লক্ষণ । 

একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন উপসর্গগুলি বিকশিত হলে সঠিক রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসার জন্য অবিলম্বে । হেপাটাইটিস লিভারের প্রদাহ বা লিভারের ক্যান্সারের মতো অবস্থা হতে পারে যদি এই অবস্থা অবনতি হয় ।

লিভার রোগের লক্ষণ

এটি নীরব ঘাতক সবচেয়ে ভয়ংকর ব্যাপার । লক্ষণই দেখা যায় না শুরুতে এর কোন । এটি ধরা পড়ে আলট্রাসনোগ্রাম করলে ।
  • শুরু হয় বিভিন্ন জটিলতা লিভারের চারপাশে চর্বি জমা হয় এরপর থেকে । লিভারের প্রদাহ সৃষ্টি হয় ধীরে ধীরে ।
  • শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে ও এ সময় শরীরের শক্তি কমতে থাকে ।
  • চোখ মুখ হাত হলুদ হয়ে যায় জন্ডিস হয়ে ।
  • রোগীর অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে যায় ও ক্ষুধা কমতে থাকে ।
  • চিন চিন ব্যাথা অনুভব হয় মাঝেমধ্যে তলপেটে ।
  • নিঃসন্দেহে মারাত্মক একটি ব্যাধি ফ্যাটি লিভার ডিজিজ এর মাধ্যমে ডায়াবেটিস সহ লিভার সিরোসিস পর্যন্ত হতে পারে ।

লিভার রোগের প্রতিকারের উপায়

ওজন কমানোর কোন বিকল্প নেই ফ্যাটি লিভার রোগ থেকে মুক্তি পেতে । এ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে নিচে তার বর্ণনা করা হলোঃ
  • ওজন ও কমবে সে সাথে খাটি লিভার রোগ ও ধীরে ধীরে কমে আসবে বিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম নিয়মিত করলে ।
  • লিভার ভালো থাকবে সঠিক পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করলে ।
  • বিরত থাকতে হবে অস্বাস্থ্যকর কোমল পানীয় বা কার্বনেটেড বেভারেজ পান করা থেকে । অনেক ক্ষতি করে এসব পানীয় লিভারের ।
  • পরিবর্তন আনতে হবে খাদ্যাভাসে ।
  • নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে ডায়াবেটিক্স ও লিপিড প্রোফাইল ।
  • বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি , ফল , লাল আটার রুটি , লাল চালের ভাত খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে ।
  • সামুদ্রিক মাছ কাঠ বাদাম অলিভ অয়েল ইত্যাদি খেতে হবে ওমেগা তিন যুক্ত খাবার ।
  • বাদ দিতে হবে চর্বি ও চিনি জাতীয় খাবার ।
  • খাওয়া বাদ দিতে হবে গরুর মাংস খাসির মাংস ইত্যাদি ।

লিভার রোগের কারণ

সংক্রমিত হতে পারে লিভার কয়েকটি কারণে । লিভারেরসরাসরি রোগ এবং অন্যান্য রোগের কারণে আক্রান্ত হওয়া এর মধ্যে অন্যতম কারণ । শরীরে সাধারণ ভাইরাল ভাইরাস প্রবেশ করে আমাদের দেশে সাধারণত খাবারের মাধ্যমে । রক্ত বা অন্যান্য মাধ্যমে প্রবেশ করে কিছু কিছু হেপাটাইটিস ভাইরাস রয়েছে । বি এফ সি ও ডি ভাইরাস অন্য আরেকটি ভাইরাস । ভয়ংকর হয়ে থাকে এগুলো অনেক বেশি ।
  • শরীরে স্থায়ী হয়ে থাকে এ ভাইরাসগুলো ছয় মাস পর্যন্ত । সেটি খুবই আক্রমনাত্ম ক হয়ে থাকে কোন ভাইরাস শরীরে ছয় মাস পর্যন্ত স্থায়ী হলে । ধীরে ধীরে সংক্রমিত করে এ ভাইরাস গুলো লিভার কে ।
  • ফ্যাটি লিভার হচ্ছে দ্বিতীয় কারণ । এ সমস্যাগুলো হচ্ছে আমাদের দেশের মানুষের শারীরিক পরিশ্রম কমে যাওয়া অতিরিক্ত ফাস্টফুড খাওয়া ও , ডায়াবেটিসের কারণে । স্থায়ী ক্ষতির সম্মুখীন হয় এসব কারণে লিভারের ভেতরে অস্বাভাবিকভাবে চর্বি বেড়ে যায় এবং ধীরে ধীরে লিভারের কার্যক্ষমতা কমে যায় ।
  • অ্যালকোহল হচ্ছে তৃতীয় কারণ । লিভার খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে অ্যালকোহলের কারণে ।
  • মাদক হচ্ছে চতুর্থ কারণ । শরীরে অনেকগুলো জটিলতা তৈরি হয় মাদকের কারণে এজন্য কিছু ওষুধ খেতে হয় যার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় লিভারের বড় ধরনের ক্ষতি হয় ।
  • গর্ভধারণ হচ্ছে পঞ্চম কারণ । লিভার নষ্ট হয়ে যায় অনেক কম বয়সে মা হতে গেলে । লিভার সিরোসিস হতে পারে এছাড়াও । এই রোগে আক্রান্ত হলে লিভার নষ্ট হয়ে যেতে পারে বিভিন্ন কারণে 12 থেকে 13 বছর বয়সে ।
  • ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে হৃদ রোগের কারণে বিভিন্ন সময়ে । লিভারে রক্তের সঞ্চালন কম হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায় হৃদরোগে অ্যাটাক করলে ।

লিভার রোগের প্রতিরোধের সহজ উপায়

ঔষধের প্রয়োজন পড়ে কখনো কখনো লিভারের রোগ সারাতে । আবার লিভারের রোগ প্রতিরোধ ও প্রতিকারের সাহায্য করে কিছু ঘরোয়া পদ্ধতিতে ।

১.অ্যাপেল সিডার ভিনেগারঃ লিভার থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে সাহায্য করে অ্যাপেল সিডার ভিনেগার । সাহায্য করে এটি সহজে চর্বি হজম করতে । পানিতে মেশান সমপরিমাণ মধু লেবু ও আপেল সিডার ভিনেগার । লিভারের রোগ থেকে দূরে থাকা যায় এক মাস নিয়মিত এই মিশ্রণটি সেবন করলে ।

২.আমলকিঃ ভিটামিন সি এর ভালো উৎস আমলকি । ভালো রাখতে সাহায্য করে এটি লিভারের কার্যক্রম কে । লিভার ভালো থাকে দিনে পাঁচ থেকে ছয়টি আমলকি খেলে ।

৩.হলুদঃ আন্টি সেপটিক উপাদান হলুদের মধ্যে রয়েছে । এটি কাজ করে আন্টি অক্সিডেন্টের মতো । লিভারের স্বাস্থ্য কে ভালো রাখে হলুদ ।

৪.পেঁপে ঃ পেপে খুবই উপকারী লিভারের যত্ন নেওয়ার জন্য । এটি খুব সহজলভ্য । সেবন করতে পারেন ২ চা চামচ পেঁপের রসের সঙ্গে আধা চা চামচ লেবুর রস মিশিয়ে নিয়মিত মিশ্রণটি । লিভার সুস্থ থাকবে মিশ্রণটি চার মাস সেবন করলে ।

৫.গ্রিন টিঃ ক্যাটাচিন রয়েছে গ্রীন টির মধ্যে । লিভারের কার্যক্রম ভালো রাখে এটি । নিয়মিত গ্রিন টি পানের অভ্যাস গড়ে তুলুন সুস্থ থাকতে চাইলে । চিকিৎসকের পরামর্শ নিন যে কোন খাবার নিয়মিত খাওয়ার আগে ।

লিভার রোগের চিকিৎসা

লিভারের রোগে চিকিৎসার চেয়ে প্রতিকারের প্রতি বেশি গুরুত্ব দেন চিকিৎসকরা।

অনেক আধুনিক চিকিৎসা উদ্ভাবিত হয়েছে বর্তমানে বিশ্বে লিভার সিরোসিসের । সুযোগ রয়েছে বিশেষ করে হেপাটাইটিস বি এর ক্ষেত্রে শিশুদের জন্মের পরপরই টিকা দেওয়া । এই টিকা নিতে পারেন প্রাপ্তবয়স্ক রা ও । হেপাটাইটিস সি-থেকে রক্ষা পাওয়া যায় একাধিক ব্যক্তির সেভ না করা রেজার ব্যবহার করা , পরীক্ষা করে নেওয়া রক্ত পরী সঞ্চালন ব্যবস্থা , অরক্ষিত যৌন সম্পর্ক পরিহার ইত্যাদি । 


লিভারের রোগ হয় সেগুলো এড়িয়ে চলতে হবে যেমনঃ দূষিত পানি , অতিরিক্ত মদ্যপান , খোলা ফলমূলের মতো যেসব কারণে । পুরোপুরি আরোগ্য লাভ হয় না লিভার সিরোসিস হলে সারা জীবন বহন করতে হয়। দূর করা যেতে পারে সঠিক চিকিৎসা ও পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে জটিলতা ।

লেখকের মন্তব্য

লিভার জনিত রোগীদের চিনি যুক্ত খাবার বা অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় খাবার গ্রহণ না করাই শ্রেয় । সবজি জাতীয় খাবার ও ফলমূল এবং পানি ও পানিজাতীয় খাবার । পরিমাণমতো শর্করা যেমন রুটি ভাড় চিড়া মুড়ি ইত্যাদি । আমিষ জাতীয় খাবার মাছ গোস্ত ইত্যাদি উচিত গ্রহণ করা । এছাড়া বাইরের খোলা খাবার তেলে ভাজা ঝাল মসলাযুক্ত খাবার বর্জন করা উচিত ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url