আমাশয় রোগের লক্ষন ও প্রতিকার সম্পর্কে জেনে নিন

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক আজকে আমরা  আমাশয় রোগের লক্ষন ও প্রতিকার সম্পর্কে  আলোচনা করব। আপনার মনে যদি আমাশয় রোগের লক্ষন ও প্রতিকার সম্পর্কে কোনো জানার আগ্রহ থাকে তাহলে আজকে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি আমাশয় রোগের লক্ষন ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
আমাশয় রোগের লক্ষন ও প্রতিকার সম্পর্কে জেনে নিন
পেট ব্যাথা নিয়ে পায়খানা হয়ে থাকে আমাদের প্রায় সময়ই । মিউকাস বেশি থাকলে মলের সাথে তখন সেটাকে আমাশয় বলি আমরা । মলের সাথে রক্ত নির্গত হলে সেই আমাশয় কে আমরা রক্ত আমাশয় বলে থাকি । সবার কাছেই অনেক পরিচিত আমাশয় রোগটি ।

ভূমিকা

সাধারণত বর্ষাকালে হওয়া একটি রোগ বলে মনে করা হয় আমাশয় বা পেট খারাপ কে । দূষিত খাবার বা জলের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এটি দ্রুত । অতিরিক্ত সতর্ক থাকুন আপনি কি খাওয়া দাওয়া করছেন এবং কোথায় করছেন সে সম্পর্কে । আমাশয় রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করব ।

আমাশয় কি

শ্লেষা বা রক্তের সাথে ঘন ঘন পায়খানা হওয়া আমাশয় হল অন্ত্রের একটি সংক্রমণ । এটি স্থায়ী থাকে সাধারণত ৩-৭ দিন । দীর্ঘস্থায়ী ও হতে পারে কিন্তু আমাশয় । পর জিবি বা ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে সৃষ্টি হয়ে থাকে আমাশয় । আমাশয় রোগটি মারাত্মক না হলেও অনেক যন্ত্রণাদায়ক ।

আমাশয় রোগের প্রকারভেদ

দুই ধরনের হয়ে থাকে আমাশয় সাধারণত

১.বেসিলারি আমাশয়ঃ শিগেলা নামে এক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের ফলে এই আমাশয় হয়ে থাকে । এটি পরিচিত শিগেলোসিস নামেও ।

ডিহাইড্রেশন এবং ব্যাকটেরিয়া বিষক্রিয়াজনিত বিশ দ্বারা সৃষ্টি হয় এই রোগটি হালকা আক্রমণ থেকে শুরু করে মারাত্মক অবস্থায় পৌঁছায় । এই আমাশয় ছড়িয়ে থাকে সাধারণত জীবাণু বাহি অপরিষ্কার হাত , বাসি খাবার এসবের মাধ্যমেই । বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে দেখা যায় এই আমাশয় ।


২.অ্যামিবিক আমাশয়ঃ এই রোগ ছড়ায় অ্যামিবা জীবাণুর মাধ্যমে । এটি পরিচিত অ্যামেবিয়াসিস নামেও । এই আমাশয় উন্নত বিশ্বে কম দেখা যায় । বেশিদিন স্থায়ী হয় এবং চিকিৎসাও তুলনামূলক কঠিন বেসিলারি আমাশয় থেকে ।

অ্যামিবা ঘটিত আমাশয়ের প্রবণতা অত্যন্ত কম পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে বড় ছেলে মেয়েদের এই আমাশয়ের প্রবণতা বেশি হয়ে থাকে । ক্লান্তীয় অঞ্চলে দূষিত জল পান করার মাধ্যমে বা দূষিত খাবার খাওয়ার মাধ্যমে এই আমাশয় হয়ে থাকে ।

দীর্ঘস্থায়ী আমাশয়ঃ স্বল্প মেয়াদে আমাশয় অ্যামিবিক আমাশয় এবং বেসিলারি আমাশয় উভয়ই । অল্প দিনেই সেরে যায় এই দুই ধরনের আমাশয় অনেক সময় সেরে যায় বিনা চিকিৎসায় এই আমাশয় গুলো । মলদার সর্বদাই ফাক হয়ে থাকে দীর্ঘস্থায়ী আমাশয়ের ক্ষেত্রে ।

অনেকদিন চিকিৎসার প্রয়োজন হয় দীর্ঘস্থায়ী আমাশয় হলে । দীর্ঘস্থায়ী আমাশয়কে ইরিটেবল বাউয়েল সিনড্রোম চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় ।

আমাশয় কেন হয়

এই রোগটি হয়ে থাকে জীবাণু ঘটিত ও পরজীবী ঘটিত সংক্রমণের মাধ্যমে । দুর্বল সেনীটেশন দ্বারা সৃষ্টি হয় আমাশয় সাধারণত । যেমনঃ
  • দূষিত খাদ্য খাওয়া থেকে
  • দূষিত জল এবং অন্যান্য পানীয় থেকে
  • সাঁতার কাটা দূষিত জলে
আমাশয় দ্বারা সংক্রামিত যখন একজন ব্যক্তি সংক্রামিত হয় তখন অন্ত্রে বাস করে সেই অনু জিপটি । মলের মধ্য দিয়ে দেহের বাহিরে চলে যায় সংক্রামিত ব্যক্তির । দূষিত হয়ে যায় এই অনুজীবটি যখন পানি বা খাবারের স্পর্শে এসে যায় ।

আমাশয় রোগের লক্ষণ

পাঁচ দিন বা তারও বেশি সময় ধরে থাকতে পারে আমাশয়ের উপসর্গ । উপসর্গগুলি হালকা মাত্রার হতে পারে কারো কারো জন্য আবার ঢুকতে পারে গুরুতর ডায়রিয়া বা বমিতে । শরীরের পানি হতে পারে এই ডায়রিয়া বা বমি তে ।
  • ডায়রিয়া রক্তাক্ত
  • ফাঁপা পেট
  • পেট ব্যথা ।
  • ফোলা পেট
  • বমি বমি ভাব
গুরুতর হয় যদি সংক্রমণ তাহলে রোগে পারমিশন্যতার কারণে অনুভব করতে পারে অন্যান্য কিছু উপসর্গগুলি যেমনঃ
  • কমে যাওয়া প্রস্রাবের পরিমাণ
  • ত্বক শুষ্ক হওয়া
  • তৃষ্ণা অতিরিক্ত
  • সর্দি এবং জ্বর
  • খিচুনি ব্যাথা পেশিতে
  • শক্তি হ্রাস দৈহিক
  • ওজন হ্রাস

আমাশায় রোগের চিকিৎসা

দুই ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে দুই ধরনের আমাশয়ের জন্য । কোন ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি রোগের জন্য উপযুক্ত হবে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নির্ধারণ করবেন ।

বেসিলারি আমাশয়ে চিকিৎসা

শিগেলা ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে বেসিলারি আমাশয় মূলত হয়ে থাকে । কোন ঔষধ গ্রহণের প্রয়োজন পড়ে না এ ধরনের আমাশয়ে সাধারণত । ভালো হয়ে যায় এটি ৩-৭ দিনের মধ্যেই । নিয়ম মেনে চলতে হবে যে সকল তা হলঃ

১.প্রচুর পরিমাণে পানীয় পান করতে হবে রোগীকে ।
২.স্যালাইন খেতে হবে প্রতিবার মলত্যাগ করার পর । স্যালাইন হচ্ছে এ রোগের সবচেয়ে বড় ঔষধ ।
৩.অন্যান্য পানীয় খেতে হবে স্যালাইন ছাড়াও যেমনঃ চিনির শরবত, ডাবের পানি , বিশুদ্ধ পানি এবং বিভিন্ন ফলের জুস ইত্যাদি ।


এ রোগ ভালো হয়ে যায় সাধারণত এ চিকিৎসায় ৩-৭ দিনের মধ্যে । অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে তিন দিনের ভেতর এই রোগ ভালো না হলে । ঔষধ এবং অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের পরামর্শ দিবেন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে । ঔষধ গুলি হলঃ
  • সিপ্রোক্সাসিন
  • ওফ্লক্রাসিন
  • লিভোফোক্সাসিন
  • এজিথ্রোমাইসিন ইত্যাদি ।

অ্যামিবিক আমাশয়ের চিকিৎসা

ঔষধের প্রয়োজন পড়ে সাধারণত অ্যামিবিক আমাশয় এর ক্ষেত্রে । বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কিছু এলোপ্যাথিক ঔষধ সেবনের পরামর্শ দিবেন প্রচুর পরিমাণে পানীয় পান করার পাশাপাশি । এক সপ্তাহের মধ্যে ভালো হয়ে যায় সে ওষুধগুলো যথাযথ পদ্ধতিতে সেবন করলে ।
  • মেট্রোনিডাজল (ফ্লাজিল)
  • টিনিডাজোল (টিনডা ম্যাক্স)
  • প্যারোমোমাইসিন
  • আয়োডোকুইনল ইত্যাদি ।
ডাক্তার প্যারাসিটামল খাবার পরামর্শ দিয়ে থাকেন এছাড়াও চলাকালীন ব্যাথা ও জ্বর নিরাময়ের জন্য ।

আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা

দুর্বল স্বাস্থ্যবিধি আমাশয়ের প্রাথমিক কারণ ।. সংক্রামিত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসলে অন্য একজন সাধারণ মানুষ সংক্রামিত হতে পারে । নিচে কয়েকটি ঘরোয়া পদ্ধতিতে আমাশয়ের চিকিৎসা নিয়ে আলোচনা করা হলো ।

১.আদা চা
অনেক রোগের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয় আদা । বেশ কয়েকটি স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে এটি এবং ঘরোয়া প্রতিকার আমাশয়ের চিকিৎসার জন্য একটি কার্যকর । পেটকে শক্তিশালী করে হজমে সহায়তা করে আদা । এক টুকরো আদা গরম পানির মধ্যে দিয়ে ফুটিয়ে নিয়ে চা বানিয়ে খেতে হবে । দুই থেকে তিনবার এই আদা চা প্রতিদিন পান করুন ।

২.আদা এবং লবণ
আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসার জন্য চমৎকার প্রতিকার আদা এবং লবণ । আদা বেটে রস করে নিন তারপর এক চিমটি লবণ দিন । এটি দুই একবার পান করুন দেখবেন আমাশয় ভালো হয়ে গেছে ।

৩.ডালিম
ডালিম একটি দুর্দান্ত প্রতিকার আমাশায় বন্ধ করার জন্য । আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসার জন্য এর রস পান করতে পারেন বা এর ফল খেতে পারেন । লুজ মোশন এর চিকিৎসায় বেশ কার্যকর ডালিমের পাতা ।

আমাশায় রোগের প্রতিরোধ

বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করতে হবে দাঁত ব্রাশ করতে হবে এবং সবসময় বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। বিশুদ্ধ পানি ও হ্যান্ডওয়াশ বা সাবান দিয়ে ভালো করে হাত ধোয়া মলত্যাগের পরে । অবশ্যই হাতে পানি ও হ্যান্ড  ওয়াস বা সাবান  ভালো করে দিতে হবে । খাবার গ্রহণের পূর্বে এবং রান্না করার আগে কম খেতে হবে বাহিরের খাবার ।  গরম পানি ও ডিটারজেন্ট পাউডার দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে ব্যবহৃত পোশাক তাওয়াল ইত্যাদি । 

ব্যবহার করা যাবে না একজনের তাওয়াল অন্যজনের । গুরত্ব সম্পর্কে জানাতে হবে শিশুদের হাত ধোয়ার । সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে অসুস্থ শিশু ডায়াপার পরিবর্তন করার সময় । সাঁতার কাটার সময় পানি গিলে ফেলা থেকে বিরত থাকতে হবে সুইমিং পুলে ।

লেখকের মন্তব্য

পরিশেষে আমরা বলতে পারি ভালোভাবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার মাধ্যমে আমাশার রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারি । বিশুদ্ধ পানি বিশুদ্ধ খাবার গ্রহণের মাধ্যমেও আমাশয় রোগ হতে রক্ষা পেতে পারি ।



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url