জুম্মার ছালাত সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

প্রিয় পাঠক আজকে আমরা জুমআর ছালাত সম্পর্কে আলোচনা করব।  আপনি যদি জুমআর ছালাত সম্পর্কে জানতে চান তাহলে আজকে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি জুমআর ছালাত সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। মুসলমান হিসেবে জুম্মার সালাত সম্পর্কে জানা একান্ত প্রয়োজন।
জুম্মার ছালাত সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে  নিন
প্রথম হিজরীতে জুম্মা ফরজ হয় এবং হিজরত কালে কাবা ও মদিনার মধ্যবর্তী বোনুসালেম বিন আওফ গোত্রের রানুনা উপত্যকায় সর্বপ্রথম রাসূলুল্লাহ( সাঃ) জুম্মার সালাত আদায় করেন । যাতে একশত মুসল্লী শরিক ছিলেন । তবে হিজরতের পূর্বে মদিনার আনছারগণ আপসে পরামর্শক্রমে ইহুদি ও নাসারাদের সাপ্তাহিক ইবাদতের দিনের বিপরীতে নিজেদের জন্য একটি ইবাদতের দিন ধার্য করেন ।

ভূমিকা

রাসুলুল্লা:( স:) বলেন জুম্মার এই দিনটি প্রথমে ইয়াহঃ)-নাসারাদের উপরে ফরজ করা হয়েছিল । কিন্তু তারা এ বিষয়ে মতভেদ করে । তখন আল্লাহতালা আমাদেরকে এই দিনের প্রতি (ওহীর মাধ্যমে) হেদায়েত দান করেন । এখন সকল মানুষ আমাদের অনুসারী । ইহুদিরা পরের দিন( শনিবার) এবং নাছারারা তারপরের দিন (রবিবার) । 


যেহেতু আল্লাহ শনিবারে কিছু সৃষ্টি করেননি এবং আরশে স্বীয় আসনে সমাসীন হন , যেহেতু ইহুদিরা এই দিনকে তাদের সাথে যোগাযোগ দিন হিসেবে বেছে নেন । যেহেতু আল্লাহর রবিবারে সৃষ্টির সূচনা করেন , সেহেতু নাছারাগণ এই দিনটিকে পছন্দ করে । এভাবে তারা আল্লাহর নির্দেশের ওপর নিজেদের যুক্তিকে অগ্রধিকার দেয় । 

পক্ষান্তরে জুম্মার দিনে সকল সৃষ্টিকর্ম সম্পন্ন হয় এবং সর্বশেষ সৃষ্টি হিসেবে আদমকে পয়দা করা হয় । তাই এই দিনটি হল সকল দিনের সেরা । এই দিনটি মুসলিম উম্মাহর সাপ্তাহিক ইবাদতের দিন হিসাবে নির্ধারিত হওয়ায় বিগত সকল উম্মতের উপর তাদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হয় । 

গ্রামে হোক বা শহরে হোক জুম্মার সালাত প্রত্যেক বয়স্ক পুরুষ ও জ্ঞান সম্পন্ন মুসলমানের উপর জামাতসহ আদায় করা ফরজে আইন । তবে গোলাম , রোগী , মুসাফির , শিশু ও মহিলাদের উপরে জুম্মা ফরজ নয় ।

জুম্মার সালাতের গুরুত্ব

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন হে মুসলমানগণ! জুমার দিনকে আল্লাহ তোমাদের জন্য (সাপ্তাহিক) ঈদের দিন হিসেবে নির্ধারণ করেছেন । তোমরা এদিন মিসওয়াক কর , গোসল কর ও সুগন্ধি লাগাও । অতএব জুমার দিন সুন্দর ভাবে গোসল করে সাধ্যমত উত্তম পোশাক ও সুগন্ধী লাগিয়ে আগেভাগে মসজিদে যাবে । এবং বসার পূর্বে প্রথমে দু রাকাত তাহিয়াতুল মসজিদ আদায় করবে । 

আল্লাহর গৃহের সম্মান দুনিয়ার সকল গৃহের উদ্ধে । তাই এ গৃহে প্রবেশ করে বসার পূর্বেই আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের সেজদা করতে হবে । আল্লাহর সবচাইতে খুশি হন বান্দা যখন সেজদা করে । কিন্তু যারা সেজদা না করে বসে পড়ে , আল্লাহ এবং আল্লাহর গৃহের প্রতি অসম্মান করে এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর অবাধ্যতা করে । 

অতঃপরখতিব মেম্বারে বসার আগ পর্যন্ত যত রাকাত খুশি নফল সালাতে মগ্ন থাকবে । এরপর চুপচাপ মনোযোগ সহকারে খুতবা শুনবে । খুতবাচলা অবস্থায় মসজিদে প্রবেশ করলে কেবল দু'রাকাত তাহিয়াতুল মসজিদ সংক্ষেপে আদায় করে বসে পড়বে । রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু সাল্লাম জুম্মা থেকে অলসতাকারীদের ঘর জ্বালিয়ে দিতে চেয়েছিলেন । 

তিনি বলেন জুম্মার পরিত্যাগকারীদের হৃদয়ে আল্লাহর মহর মেরে দেন । অতঃপর তারা গাফেলদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায় । তিনি আরো বলেন যে ব্যক্তি অবহেলা করে পরপর তিন জুম্মা পরিত্যাগ করল সে ব্যক্তি ইসলামকে পশ্চাতে নিক্ষেপ করল । এবং মুনাফিক বলেও গণ্য করা হয় ।

জুম্মার সালাতের ফজিলত

জুমার দিন হল দিন সময়ের সেরা । এই দিন আল্লাহর নিকটে ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতরের দিনে চাইতেও মহিমান্বিত । এই দিন নিকটবর্তী ফেরেশতাগণ , আকাশ , পৃথিবী , বায়ু , , পাহাড় সমুদ্র সবই কেয়ামত হবার ভয়ে ভীত থাকে । জুম্মার রাতে কিংবা দিনে কোন মুসলিম মারা গেলে আল্লাহ তাকে কবরে ফেতনা হতে বাঁচিয়ে দেন । 

এই দিন আদম আলাই সাল্লাম কে সৃষ্টি করা হয় । এই দিনটাকে জান্নাতের প্রবেশ করানো হয় ও এই দিনটাকে জান্নাত থেকে নামিয়ে দেওয়া হয় । এই দিনে তার তওবা কবুল হয় এবং এই দিনেই তার মৃত্যু হয় । এই দিন সিঙ্গায় ফুক দেওয়া হবে ও কেয়ামত সংগঠিত হবে । এই দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু সাল্লাম এর উপরে বেশি বেশি দরুদ পাঠ করতে হয় । 

এই দিন ইমামের মেম্বারে বসা হতে জামাতে সালাত শেষে সালাম ফিরানো পর্যন্ত সময়ের মধ্যে এমন একটি সংক্ষিপ্ত সময় রয়েছে , যখন বান্দার যেকোনো সঙ্গত প্রার্থনা আল্লাহ কবুল করেন । দোয়া কবুলের এই সময়টির মর্যাদা লাইলাতুল কদরের ন্যায় বলে হাফেজ ইবনুল কাইয়ুম রহমতউল্লাহ মন্তব্য করেন । তিনি বলেন জুম্মার সমস্ত দিনটি ইবাদতের দিন । 

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন , যে ব্যাক্তি জুম্মার দিন গোসল করে সুগন্ধি মেখে মসজিদে এলো ও সাধ্যমত নফল সালাত আদায় করল । অতঃপর চুপচাপ ইমামের খুতবা শ্রবন করলো ও জামাতে সালাত আদায় করলো , তার পরবর্তী জুম্মা পর্যন্ত এবং আরও তিনদিনের গুনাহ মাফ করা হয় । তিনি আরো বলেন জুম্মার দিন ফেরেশতাগণ মসজিদের দরজায় দাঁড়িয়ে থাকেন ও মুসল্লিদের নেকি লিখতে থাকেন । এদিন সকাল-সকাল যারা আসে তারা উট কোরবানির সমান নেকি পায় ।

অতঃপর খতিব দাড়িয়ে গেলে ফেরেশতাগণ দপ্তর গুটিয়ে ফেলেন ও খুতবা শুনতে থাকেন । তিনি আরো বলেন যে ব্যক্তির জুম্মার দিন ভালোভাবে গোসল করে । অতঃপর সকাল সকাল মসজিদে যায় পায়ে হেঁটে , গাড়িতে নয় এবং 

আগে ভাগে নফল সালাত শেষে ইমামের কাছাকাছি বসে ও মনোযোগ দিয়ে খুতবা শুরু থেকে শুনে অনর্থক কিছু করে না তার প্রতি পদক্ষেপে এক বছরে সিয়াম ও কেয়ামের অর্থাৎ দিনের সিয়াম ও রাতের বেলায় নফল সালাতের সমান নেকি হয় ।

জুম্মার খুতবা

জুম্মার জন্য দুটি খুতবা দেওয়া সুন্নত যার মাঝখানে বসতে হয় । ইমাম মেম্বরে বসার সময় মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে সালাম দিবেন । আবু বক্কর ও ওমর (রাঃ) এটি নিয়মিত করতেন । আবু হানিফা ও মালে ক রহমতুল্লাহ প্রমুখ মসজিদে প্রবেশ কালে সালাম করাকেই যথেষ্ট বলেছেন । খতিব হাতে লাঠি নিবেন । নিতান্ত কষ্টদায়ক না হলে সর্বদা দাঁড়িয়ে খুতবা দিবেন । 


প্রথম খুতবায় হামদ দরুদ ও কিরাত ছাড়াও সকলকে নসিহত করবেন অতঃপর বসবেন । দ্বিতীয় খুতবাই হামদ দ ও দরুদ সহ সকল মুসলমানের জন্য দোয়া করবেন । নসিহত করা যায় প্রয়োজনে এই সময়ও । ইমাম শাফিঈ রহমাতুল্লাহ হামদ , দরুদ ও নসিহত তিনটি বিষয়কে খুতবার জন্য ওয়াজিব বলেছেন ।

যাতে কুরআন থেকে একটি আয়াত হলেও পাঠ করতে হবে । সূরায়ে ক্বাফ এর প্রথম অংশ বা অন্য কিছু আয়াত তেলাওয়াত করা মুস্তাহাব । খুতবা আখেরাতমুখী , সংক্ষিপ্ত ও সারগর্ভ হওয়া বাঞ্ছনীয় । তবে দীর্ঘ হওয়াও জায়েজ আছে ।

মাতৃভাষায় খুতবা দান

খুতবা মাতৃভাষায় এবং অধিকাংশ মুসল্লীদের বোধগম্য ভাষায় হওয়া জরুরি । কেননা খুতবা অর্থ ভাষণ যা শ্রোতাদের বোধগম্য ভাষায় হওয়াই স্বাভাবিক । রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম সময়ের চাহিদা অনুযায়ী খুতবা দিতেন । নবী আর বসবেন না । তাই রাসূলের ওয়ারিশ হিসাবে প্রত্যেক আলেম ও খতিবের উচিত মুসল্লিদের নিজস্ব ভাষায় কোরআন ও সহীহ হাদিসের বিধানসমূহ খুতবায় ব্যাখ্যা করে শোনানো । 

নইলে খুতবার উদ্দেশ্য বিনষ্ট হবে । হযরত জাবের বিন সামুরাহো(রাঃ) বর্ণিত হাদিসে এসেছে যে খুতবার সময় রাসুলুল্লাহ সাঃ এর দুচোখ উত্তেজনায় লাল হয়ে যেত । গলার স্বর উঁচু হতো ও ক্রোধ ভীষণ হত । যেন তিনি কোন স্বৈন্যদলকে হুঁশিয়ার করছেন ।

দোয়া চাওয়া

মুসল্লিদের নিকটে বিশেষ কোনো দোয়া চাওয়ার থাকলে খতিব বা ইমামের মাধ্যমে পূর্বে সকলকে অবহিত করা উচিত । যাতে সবাই উক্ত মুসল্লির প্রার্থনা অনুযায়ী আল্লাহর নিকটে দোয়া করতে পারে ও নিজেদের দোয়ার নিয়তের মধ্যে তাকেও শামিল করতে পারে । কেননা সালাম ফিরানোর মাধ্যমে সালাত শেষ হয়ে যায় । আর সালাতের মধ্যেই দোয়া কবুল হয় । 

বিশেষ করে সিজদার সময় । কিন্তু সালাম ফিরানোর পর ইমাম ও মুক্তাদী সম্মিলিতভাবে দোয়া ও আমিন বলার প্রচলিত প্রথাটি রাসুলুল্লাহ সাঃ এর সুন্নাতের পরিপন্থী ।

দোয়া কবুলের সময় কাল

বিদ্বান গন জুম্মার দিনে দোয়া কবুলের সঠিক সময়কাল নিয়ে মতভেদ করেছেন । এই মতভেদের ভিত্তি মূলতঃ আমর বিন আওফ(রাঃ) বর্ণিত তিরমিজির হাদিস , যেখানে জামাতের শুরু থেকে সালাম ফিরানো পর্যন্ত সময়কালকে এবং অপরটি আব্দুল্লাহ বিন সালাম(রাঃ) বর্ণিত হাদিস যেখানে ওই সময়কালকে আসরের সালাতের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত বলা হয়েছে ।

ঘুমের প্রতিকার

দোয়া কবুলের এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে অনেক মুসল্লি বিশেষ করে খুতবার সময় ঘুমে ঢুলতে থাকে । ফলে তারা খুতবার কিছুই উপলব্ধি করতে পারে না । এজন্য এর প্রতিকার হিসাবে রাসূলুল্লাহ(ছাঃ) এরশাদ করেন তোমাদের কেউ যখন খুতবার সময় ঘুমে ধরতে থাকে তখন সে যেন তার অবস্থান পরিবর্তন করে। এ বিষয়ে মুসল্লিদের পরস্পরকে সাহায্য করা উচিত ।

আমাদের শেষ কথা

বাধ্যগত কারণে জুম্মা পড়তে অপারগ হলে জোহর পড়বে । সফরে থাকলে কছর করবে । মুসাফির একাধিক হলে জামাতের সাথে কসর পড়বে । জুম্মার সালাত ইমামের সাথে এক রাকাত পেলে বাকি আরেক রাকাতে যোগ করে সূরা পড়ে নিতে হবে ।





































এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url