হাঁপানি ও শ্বাসকষ্ট সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক আজকে আমরা হাঁপানি ও শ্বাসকষ্ট সম্পর্কে আলোচনা করব। আপনার মনে যদি হাঁপানি ও শ্বাসকষ্ট সম্পর্কে কোনো জানার প্রয়োজন থাকে তাহলে আজকে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি হাঁপানি ও শ্বাসকষ্ট সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। তাই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে হাঁপানি ও শ্বাসকষ্ট সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন ।
হাঁপানি ও শ্বাসকষ্ট সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন
সরাসরি আক্রমণ করে করোনাভাইরাস শ্বাসতন্ত্রে । সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে হাঁপানি রোগীরা । হাঁপানের সমস্যা বেড়ে যায় শীতকাল এলে । তাদের বিপদ খানিকটা বেশি যাদের শ্বাসকষ্ট আছে । প্রথমে বাসা বাঁধে শ্বাসনালীর উপরের অংশে ফুসফুস বা শ্বাসনালীতে যে কোন সংক্রমণ হওয়ার আগে ।

ভূমিকা

হাঁপানি একটি এলার্জি জনিত রোগ । নির্দিষ্ট কোন কারণ নেই হাঁপানি হওয়া । হাঁপানি হয়ে থাকে কয়েকটি কারণে । ৫০ ভাগ চান্স রয়েছে হাঁপানি রোগ হওয়ার যদি পরিবারের কারো হাঁপানি থেকে থাকে । প্রথম অবস্থায় হাঁপানির যে লক্ষণগুলো দেখা যায় । যেমন শ্বাসকষ্ট , কাশি , গলার ভিতরে আওয়াজ হওয়া , অনুভূতি হওয়া বুকে চাপা ভাব , শ্বাস প্রশ্বাস নেওয়া দ্রুত , কাশি হলে তা সহজে ভালো হতে চায় না ।

কেন হয় হাঁপানি

সুনির্দিষ্ট করে বলা যায় না হাঁপানির কারণ । যেগুলো হাঁপানি রোগের উৎপত্তি ও সাহিত্যের ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করে থাকে কতগুলো বিষয় ।
  • হাঁপানি রোগ বংশগত কারণে হতে পারে । আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে বংশে কারো এই রোগ থাকলে।
  • হাঁপানির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ , ছত্রাক , পশুর লোম , রেনু , আরশোলা ইত্যাদি ।
  • যেসব কারণে হাঁপানি রোগ বেড়ে যায়ঃ কারখানার বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ , সিগারেটের ধোঁয়া , বায়ু দূষণ , রঙের ঝাঁঝালো গন্ধ , ঠান্ডা বাতাস , মসলার ঝাঁজ , ইত্যাদি ।
  • অতি রিক্ত ব্যবহারের কারণে হাঁপানি হতে পারেঃ হিরোইন , গাজা , অ্যাসপিরিন , ব্যাথা নাশক বিভিন্ন ওষুধ ইত্যাদি ।
  • যেসব কারণে হাঁপানি তীব্রতা বেড়ে যেতে পারেঃ অতিরিক্ত আবে গ প্রবণতা এবং মানসিক চাপ
  • শিশুদের এবং প্রাপ্ত বয়স্কদের এই রোগ বেশি হয় ।
  • গরুর মাংস , ইলিশ , কচু , বেগুন , চিংড়ি এইসব খেলে কারো কারো ক্ষেত্রে হাঁপানি বেড়ে যেতে পারে ।

হাঁপানি রোগের লক্ষণ

  • অনেকদিন যাবত শ্বাসকষ্ট হওয়া
  • শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়া ঋতু পরিবর্তনের সময়
  • অনুভূত হওয়া বুকে চাপ
  • শুকনো কাশি বা ক্যাশি হওয়া
  • হঠাৎ বুকের মধ্যে শব্দ করা শ্বাস প্রশ্বাসের সময়
  • দম বন্ধ হয়ে আসা
  • মুখে বা নাকে ধুলোবালি গেলে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়া
  • প্রচন্ড ভয় বা রাগ , অতিরিক্ত মাত্রায় ব্যায়াম , ভাইরাসের সংক্রমণ ইত্যাদি
  • হাঁপানির সমস্যাকে বাড়িয়ে দেয় অতিরিক্ত মাত্রায় ব্যথা নাশক ঔষধ যেমনঃ ডাইকোফেন , প্রফানাল , অ্যাসপিরিন , এসিক্লোফেনাক জাতীয় ঔষধ ।

ঘরোয়া উপায় হাঁপানি থেকে বাঁচার

আসুন জেনে নেই ঘরোয়া উপায়ে হাঁপানি থেকে বাচার

১.খেতে পারেন মধু হাঁপানির সমস্যায় । শ্বাসকষ্ট অনেকটাই কমে যাবে আপনি যদি প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে মধুর সঙ্গে সামান্য দারুচিনির গুড়া মিশিয়ে খেলে । এই মিশ্রণ খুবই উপকারী হাঁপানি ছাড়া সর্দি কাশিতেও ।


২.কিছুক্ষণ ফুটিয়ে নিন এক টুকরো আদা পানিতে । খেয়ে নিন ঠান্ডা করে । এতে হাঁপানি দূর হবে এবং সর্দি কাশি থাকলে উপকার পাবেন ।

৩.দুধের মধ্যে চার থেকে পাঁচ কুয়া রসুন দিয়ে ফুটিয়ে নিন ঠান্ডা করে খেয়ে ফেলুন এতে হাঁপানি সহ ফুসফুসের যেকোনো রোগ থেকে উপকার পাবেন ।

৪.লেবুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং আন্টি অক্সিডেন্ট । এক গ্লাস পানির মধ্যে লেবুর রস সামান্য চিনি দিয়ে খেলে অনেকটাই কমে যাবে হাঁপানি ।

৫.কাঁচা পেঁয়াজ খেয়ে দেখতে পারেন কারণ আমাদের নাশাপদকে পুরস্কার রাখতে সহায়তা করে ।

৬.লেভেন্ডার তেল খুবই কার্যকরী হাঁপানির সমস্যার জন্য । সামান্য পানির মধ্যে পাঁচ ছয় ফোঁটা লেভেন্ডার তেল দিয়ে পানির ভাব নিন । উপকার পাবেন দ্রুত ।

ঘরোয়া উপায় হাঁপানির সমস্যা আপনাকে সাময়িকভাবে মুক্তি দিতে পারে । চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে সমস্যা জটিল হলে ।

কি খাবার খেলে হাঁপানি ভালো হয়

এলার্জির সাথে যেহেতু হাঁপানি রোগের সম্পর্ক রয়েছে । এই ধরনের রোগের এলার্জি জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলাই ভালো । রোগীর শ্বাসকষ্ট ও অন্যান্য উপসর্গ বাড়িয়ে দেই ঠান্ডা খাবার বা ধুলোবালিতে । তাই হাঁপানি ও শ্বাসকষ্ট রোগীদের এলার্জি জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলাই ভালো ।

১.অনেকেরই এলার্জির কারণ হয় চিংড়ি মাছের সালফাইটের পরিমাণ বেশি থাকে বলে । হাঁপানি রোগীর সাবধান থাকতে হবে যেসব বিষয়ে যেমনঃ টিন জাত প্রক্রিয়াজাত খাবার থেকে কারণ প্রিজারভেটিভ ব্যবহার করা হয় এইসব খাবারে । রাসায়নিক উপাদানও থাকে এই ধরনের খাবারে ।

২.কারো কারো এলার্জি থাকে কাজুবাদাম , পেস্তা বাদাম , চিনা বাদাম ইত্যাদি ।

৩.আইসক্রিম , ঠান্ডা দুধ , দই , পনির ইত্যাদি খেলে অনেকের হাঁপানি ও শ্বাসকষ্ট দেখা দেয় । যেসব রোগীর হাঁপানি ও শ্বাসকষ্ট রয়েছে তাদের ঠান্ডা দুধ আইসক্রিম দই না খাওয়াই ভালো ।

৬.হাঁপানির সমস্যা বাড়াতে পারে ওমেগা থ্রি ও ওমেগা সিক্স সমৃদ্ধ খাবার হাঁপানের সমস্যা বাড়াতে পারে । শিশুদের ২৭ শতাংশ এজমার কারণ ফাস্টফুড । এতে উচ্চমাত্রায় চর্বি থাকে যা প্রদাহ বাড়ায় । যার কারনে এসব খাবারে এজমা ও হাঁপানির ঝুঁকি বেশি ।

৭.এলার্জি থাকে অনেকের ডিমে । এছাড়াও হাঁসের মাংস ,গরুর মাংস , ইলিশ মাছ , বেগুন , মিষ্টি কুমড়া , নারিকেল , কচু এসব খাবারও এলার্জি থাকে ।

এলার্জি হলে যেসব খাবার আমরা খেতে পারিঃ সবুজ শাকসবজি খেতে হবে প্রচুর পরিমাণে । ভিটামিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রদাহ কমায় সবুজ শাকসবজিতে । গাজরে আছে ভি টাকা রুটিন যা আমাদের সুরক্ষা দেয় । এছাড়াও আমরা খেতে পারি আপেল , সামুদ্রিক মাছ ওমেগা থ্রি আছে এমন সব খাবার ।

এছাড়াও খেতে পারি আদা দিয়ে চা । কুচি কুচি করে আদা চিবিয়ে খেতে পারি রসুন খেতে পারি মধু খেতে পারি । হালকা গরম পানিতে মধু মিশে দিনে তিন চারবার খেতে পারি ।

হাঁপানি রোগের ভ্যাকসিন ও চিকিৎসা

হাঁপানি এবং শ্বাসকষ্টে সারা বিশ্বে প্রায় ১০ কোটি লোক আক্রান্ত । অত্যাধুনিক চিকিৎসা পায় না ৯০% এরও বেশি এবং অনেক রোগী মারা যায় প্রতিবছর । হাঁপানি ও শ্বাসকষ্ট থেকে মুক্তির উপায় হলো যেসব কারণে এলার্জি হয় তা থেকে যতদূর সম্ভব এড়িয়ে চলা । হাঁপানি ও শ্বাসকষ্ট রোগীদের প্রথমে দরকার এলার্জির পরীক্ষা । 


নানান ধরনের ওষুধ পাওয়া যায় বাজারে হাঁপানি ও শ্বাসকষ্ট রোগীর । রোগীসুস্থ থাকতে পারে ডাক্তার দেখিয়ে প্রয়োজন মত ঔষধসেবন করার মাধ্যমে। হাঁপানি রোগের চিকিৎসা শুরু করা উত্তম ইনহেলার দিয়ে । বিশেষজ্ঞরা মনে করেন হাঁপানি রোগের প্রাথমিক চিকিৎসা ইনহেলার । ইনহেলার এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই বললেই চলে ।মুখে খাবার ঔষধ অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।

ইনহেলার নিরাপদ গর্ভবতী মহিলাদের জন্য । তুলনামূলকভাবে ইনহেলার গ্যাস দামি । অনেক গরিব রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হয় শুধু মুখে খাবার ওষুধ দিয়ে , হাঁপানি রোগ নিয়ন্ত্রণের বিকল্প চিকিৎসা নয় । দুই থেকে চার মিলিগ্রাম ব্রংক ডাইলেটার সালবিউটামল প্রতিদিন ৩-৪ বার সেবন করতে হবে । দুই থেকে তিনবার চলবে এমাইনো ফাইলিং ট্যাবলেট ১০০ মিলিগ্রাম ।

লেখকের মন্তব্য

পরিশেষে বলা যায় শীতের সময় হাঁপানি রোগীকে সাবধানে থাকতে হবে । ধুলাবালি হতে দূরে থাকতে হবে । ঘরে আলো বাতাসের ব্যবস্থা রাখতে হবে । জরুরি অবস্থা দেখা দিলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url