ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার জেনে নিন

আসসালামু আলাইকুম। আজকে আমি এই পোস্টে ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে আলোচনা করতে যাচ্ছি। সাধারণত মাথাব্যাথা, শরীরের ব্যাথা, জ্বর ভাব, চোখের পিছন দিকে প্রচন্ড ব্যাথা হওয়া, হাড়, মাংসপেশী, এবং সমস্ত শরীরে ব্যাথা অনুভব করা হলো ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ। 
ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার জেনে নিন

তবে শরীরে যদি ছোপ ছোপ দাগ দেখা দেয়, মাথা ব্যাথা হয়, এবং গায়ে জ্বর আসা এই তিন ধরনের লক্ষণ হলো ডেঙ্গু জ্বরের প্রধান লক্ষণ। সাধারণত এই লক্ষণগুলো কারনে দুইদিন থেকে সাত দিন পর্যন্ত জ্বর শরীরে থাকে। এক সপ্তাহের মধ্যে বেশিরভাগ রোগীই  সুস্থ হয়ে ওঠেন।

পোস্ট সূচিপত্রঃ ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার জেনে নিন

ভূমিকাঃ ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার জেনে নিন

ডেঙ্গির সমার্থক ভিন্ন শব্দ থেকে এসেছে ডেঙ্গু। এই রোগ সাধারণত এডিস মশা বাহিত ভাইরাস জনিত গ্রীষ্মকালীন একটি রোগ। মশার কামড়ের ফলে আপনার শরীরে ভাইরাস সংক্রমনের দিন থেকে ১৫ দিনের মধ্যে ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গ দেখা দিতে পারে। এই উপসর্গগুলির মধ্যে রয়েছে, মাথাব্যাথা, পেশিতে ব্যাথা, গাঁটে ব্যথা,বমি ভাব, এবং জ্বর এই লক্ষণ গুলোর করনে ডেঙ্গু  দিতে পারে।
বিশেষ করে ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে আমাদের ভালোভাবে জেনে থাকা একান্ত দরকার। তাই আমরা এখন নিচে ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জানব।

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও প্রতিকার

মশাবাহিত ভাইরাল সংক্রমণ হলো ডেঙ্গু জ্বর। ডেঙ্গু জ্বর এডিস মশার কামড় থেকে হয়ে থাকে। এই রোগে কেউ তখনই আক্রান্ত হতে পারে যখন  মশা এডিসে আক্রান্ত ব্যক্তিকে কামড় দিয়ে তার থেকে ভাইরাস নিয়ে এসে একজন অ-সংক্রমিত ব্যক্তিকে কামড় দেয় তাহলে এডিস আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এদিক থেকে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তর এবং মৃতের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। আমরা এখন ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে আলোচনা করব।
ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ
  • জ্বর হচ্ছে একমাত্র ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ। ১০১ ডিগ্রি থেকে ১০৩ ডিগ্রি তাপমাত্রা শরীরে থাকতে পারে। একটানা জ্বর থাকতে পারে, আবার জ্বর ঘাম দিয়ে ছেড়ে যাওয়ার পর জ্বর পুনরায় আবার আসতে পারে।
  • ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে শরীরে ব্যাথা করে, মাথাব্যাথা করে, চোখের পিছনে ব্যথা হতে পারে। শরীরের উপরে র‌্যাশ বা লালচে দাগ দেখা দিতে পারে।
  • মনে হবে শরীর ঠান্ডা হচ্ছে, ক্ষুধা ভাব কমে যাওয়া, এবং শরীর ম্যাজম্যাজ করা এসব লক্ষণ দেখা দিতে পারে। সিভিয়ার ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে, পেটে প্রচন্ড ব্যথা হয়, অতিরিক্ত পেট ফুলে যাওয়া, ত্বকের নিচে রক্তক্ষরণ হতে পারে, মাড়ি থেকে রক্ত পড়া, রক্ত বমি হওয়া, শ্বাসকষ্ট হওয়া, শরীর ঠান্ডা অনুভব করা, নারীর স্পন্দন কমে যাওয়া, ঘুম ঘুম ভাব চলে আসা, এবং চেতনা হারানো এই লক্ষণ গুলো দেখা দিতে পারে।
  • ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হওয়ার ফলে মানব দেহের পানি শূন্যতা তৈরি হয়। ফলে পালস রেট অনেকটা বেড়ে যায় এবং রক্তচাপ কমে যায়। শরীর ঠান্ডা হওয়া শুরু করে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে যায়। রোগীর ভিতরে অস্থিরতা চলে আসে। ঠিক তখনই সময় বেশি নষ্ট না করে রোগীকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হাসপাতালে ভর্তি করা উচিত।
ডেঙ্গু রোগের প্রতিকার
  • সাধারণত ডেঙ্গু জ্বর হলে ওষুধ হিসেবে প্যারাসিটামল খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। অনেকে আবার এই বিষয়ে না জানার ক্ষেত্রে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ব্যাথা হওয়ার কারণে ব্যাথা নাশক ওষুধ খেয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে বলেছেন চিকিৎসকরা। কারণ এই সময় ব্যাথা নাশক ঔষধ খাওয়ার ফলে রক্তক্ষরণ হতে পারে এবং মৃত্যুও ঘটতে পারে।
  • ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হলে ডাক্তাররা বেশি বেশি তরল খাবার খাওয়ার কথা বলেছেন বা পরামর্শ দিয়েছেন। তরল খাবারের মধ্যে খাবার স্যালাইন, স্যুপ, ডাবের পানি, ভাতের মার, লেবু, ফলের রস ইত্যাদি খাবার। তরল খাবার খাওয়ার ফলে ৯০% ডেঙ্গু তীব্রতা কমিয়ে দেয়। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে যেমন মুরগির গোশত, দুধ, ডিম, ডাল এবং ছোট মাছের ঝোল বেশি রাখতে হবে খাদ্য তালিকার মধ্যে।
  • ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর প্লাটিলেট কমে যায়। যে খাবার খেলে প্লাটিলেট বাড়বে সে খাবারগুলো খেতে হবে। যেমন কাঠবাদাম, সূর্যমুখী বীজ, দই, গ্রিন টি, ব্রকলি, ক্যাপসিকাম, পালং শাক, হলুদ, আদা, রসুন।
  • পেয়ারাতে আছে ভিটামিন সি ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে পেয়ারার শরবত খাওয়ানো যেতে পারে। এই ভিটামিন সি সমৃদ্ধ শরবত রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে সক্রিয় করে ডেঙ্গু সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে পারে।
  • ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার পর রক্তের প্লাটিলেট বাড়ানোর জন্য নিম পাতার ভূমিকা অপরিসীম। নিমপাতা এর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর ক্ষমতা রয়েছে।

ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ২০২৩

ডেঙ্গু ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হওয়া ব্যক্তিকে কামড়ানোর এডিস ভাইরাস বহনকারী মশার কামড়ে এডিস জ্বরের লক্ষণ দেখা দিতে পারে । এই লক্ষণগুলো আমরা এখন জানবো। বিশেষ করে আমাদের প্রত্যেকের ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ সম্পর্কে জেনে রাখা জরুরী । তাই আমরা এখন ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ২০২৩ সম্পর্কে জানব। জ্বর হচ্ছে একমাত্র ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ১০১ ডিগ্রি থেকে ১০৩ ডিগ্রি তাপমাত্রা শরীরে থাকতে পারে। 
একটানা জ্বর থাকতে পারে, আবার জ্বর ঘাম দিয়ে ছেড়ে যাওয়ার পর জ্বর পুনরায় আবার আসতে পারে।ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে শরীরে ব্যাথা, মাথাব্যাথা, চোখের পিছনে ব্যাথা হতে পারে। শরীরের চামড়ার উপরে র‌্যাশ বা লালচে দাগ দেখা দিতে পারে।মনে হবে শরীর ঠান্ডা হচ্ছে, ক্ষুধা ভাব কমে যাওয়া, এবং শরীর ম্যাজম্যাজ করা এসব লক্ষণ দেখা দিতে পারে। সিভিয়ার ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে, পেটে প্রচন্ড ব্যাথা হয়, অতিরিক্ত পেট ফুলে যাওয়া, ত্বকের নিচে রক্তক্ষরণ হতে পারে, 

মাড়ি থেকে রক্ত পড়া, রক্ত বমি হওয়া, শ্বাসকষ্ট হওয়া, শরীর ঠান্ডা অনুভব করা, নারীর স্পন্দন কমে যাওয়া, ঘুম ঘুম ভাব চলে আসা, এবং চেতনা হারানো এই লক্ষণ গুলো দেখা দিতে পারে।ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হওয়ার ফলে মানব দেহের পানি শূন্যতা তৈরি হয়। ফলে পালস রেট অনেকটা বেড়ে যায় এবং রক্তচাপ কমে যায়। শরীর ঠান্ডা হওয়া শুরু করে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে যায়। রোগীর ভিতরে অস্থিরতা চলে আসে। ঠিক তখনই সময় বেশি নষ্ট না করে রোগীকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হাসপাতালে ভর্তি করা উচিত।

ডেঙ্গু জ্বর কি ছোঁয়াচে রোগ

ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তি জন্য মশারি ব্যবহার করা অনেক জরুরী। মশারি ব্যবহার করার উদ্দেশ্য হচ্ছে অসুস্থ ব্যক্তিকে কামড়িয়ে আবার যেন সুস্থ ব্যক্তিকে কামড়াতে না পারে। ডেঙ্গু রোগ ছোঁয়াচে রোগ নয় বা এটি এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তিতে পার হতে পারে না। এটি সাধারণত রক্ত সম্বন্ধীয় একটি ভাইরাস। ডেঙ্গু রোগ এডিস মশার দ্বারাই ছড়িয়ে থাকে। অঙ্গদানের মাধ্যমেও পরিবাহিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

শিশুর ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার ২০২৩

শিশুদের ডেঙ্গু রোগ অত্যন্ত বিপদজনক। শিশুদের জন্য ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ বিপদজনক চিহ্নিত হিসেবে স্বীকৃত, সেগুলো হলো অনবরত বমি হওয়া, পেট ব্যাথা করা, শরীরের বিভিন্ন জায়গায় পানি জমা, নাক দিয়ে রক্ত পড়া, মাড়ি থেকে রক্তপাত হওয়া, লিভারের সমস্যা দেখা দেওয়া, অস্থিরতা আসা,  অতিরিক্ত দুর্বল ভাব আসা। এই লক্ষণ গুলো ডেঙ্গু জ্বরের ক্ষেত্রে শিশুদের দেখা দিতে পারে।

শিশুদের ডেঙ্গু রোগের প্রতিকার হিসেবে আমরা প্রথমে যে কাজটা করতে পারি সেটি হল বাচ্চাদের গায়ের জ্বর আসা মাত্রই আমরা আগে ডেঙ্গু পরীক্ষা করব। যে কোন ডায়াগনস্টিকে সহজে ডেঙ্গু পরীক্ষা করাতে পারেন। এগুলোর পাশাপাশি বাচ্চার গায়ে যদি জ্বর আসে সর্বপ্রথম আপনাকে তরল খাবার খাওয়াতে হবে। 

ডাবের পানি, খাবার স্যালাইন চিড়ার পানি, গ্লুকোজের পানি এরকম জাতীয় তরল খাবার বেশি বেশি খাওয়াতে হবে বাচ্চাকে খেয়াল রাখতে হবে ২৪ ঘন্টায় কমপক্ষে যেন ৬ বার প্রসাব করে। এতে আপনি বুঝতে পারবেন আপনার বাচ্চা পানির শূন্যতা থেকে দূরে রয়েছে। তারপর কিছু বাচ্চা আছে তাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। 

হাসপাতালে ভর্তি করার পর ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী তাকে স্যালাইন বা অন্যান্য চিকিৎসা দেওয়া হয়। ডাক্তারের পরামর্শের চিকিৎসা নিলে বাচ্চাগুলো খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যেতে পারে। যে বাচ্চার ডেঙ্গু হয়েছে বাসায় তাকে সর্বক্ষণ মশারির ভিতরে রাখতে হবে যেন আরেকটি সুস্থ মানুষকে ছরিয়ে দিতে না পারে।

ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধে করণীয়

ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধে আমাদের কিছু করণীয় আছে। ডেঙ্গু জ্বর থেকে বাঁচতে ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় গুলো লক্ষ্য রাখতে হবে। আমরা এখন জেনে নিব ডেঙ্গু জ্বরের থেকে বাঁচার উপায়-
  • ঘিঞ্জি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় যাতে না থাকতে হয় সেদিকে খেয়াল রাখা।
  • মশা তাড়ানোর ঔষধ বা বাড়িতে মশারি ব্যবহার করা।
  • আপনি যখন বাহিরে বের হবেন ফুলহাতা জামা ব্যবহার করন।
  • হাতে মজা পড়ুন।
  • জানালায় নেট ব্যবহার করুন এবং দরজা জানলা ভালো করে বন্ধ করে রাখুন।
  • আপনার যদি ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখা দেয় তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
  • মনে রাখবেন দিনের বেলা বা সন্ধ্যার সময় ডেঙ্গু মশা বেশি কামড়ায়।

লেখকের শেষ কথা

পরিশেষে আমরা বলতে পারি ডেঙ্গু একটি বিপদজনক রোগ। ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে হলে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন জায়গায় আমাদেরকে বসবাস করতে হবে। বাসা বাড়ি ফুলের টবে জমে থাকা পানি অপসারণ করতে হবে। ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে এই পোস্টে বিষদ আলোচনা করেছি। এই পোস্টটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই অন্যদের মাঝে শেয়ার করবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url