কুরআন ও হাদিসের আলোকে পর্দার গুরুত্ব সম্পর্কে জেনে নিন

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক আজকে আমরা কুরআন ও হাদিসের আলোকে পর্দার গুরুত্ব সে সম্পর্কে বিশদ আলোচনা করব। আপনার মনে যদি কুরআন ও হাদিসের আলোকে পর্দার গুরুত্ব সে সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন জেগে থাকে তাহলে আজকে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে কুরআন ও হাদিসের আলোকে পর্দার গুরুত্ব সে বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
কুরআন ও হাদিসের আলোকে পর্দার গুরুত্ব সম্পর্কে জেনে নিন
পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা ইসলাম বিশ্বজনীন এক চিরন্তন ও শাশ্বত । নারীদের সম্মান , মর্যাদা এবং স্বীকৃতি সকল অধিকারের , আরো রয়েছে সতীত্ব সুরক্ষা ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য ব্যাপক কঠোরতা ইসলামে রয়েছে । হিজাব বা পদ্মা পালনের বিধান ইসলাম নারীদের উপর আরোপ করেছে তাদের সম্মান মর্যাদা এবং সতীত্ব অক্ষুণ্য রাখার জন্য ।

ভূমিকা

মূলত নারীর সৌন্দর্য ও মর্যাদার প্রতীক হিজাব বা পর্দা । নারীদের রক্ষাকবচ হচ্ছে তাদের সতীত্ব ও ইজ্জত । চারিত্রিক পবিত্রতা রক্ষার অতি সহজ ও কার্যকর উপায় নারী ও পুরুষ উভয়ের পর্দা । হৃদয় ও মনের পবিত্রতা অর্জন করা সম্ভব পর্দার বিধান অনুসরণের মাধ্যমে ।

এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা'আলা বলেন এ বিধান তোমাদের ও তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ ।(সূরা আহযাবঃ৫৩)

সমাজের অশ্লীলতা ও ব্যভিচার নিরসনের লক্ষ্যে এবং সামাজিক অনিষ্ঠতা ও ফেতনা ফাসাদ থেকে বাঁচার জন্যই ইসলাম পর্দা পালনের বিধান আরোপ করেছেন ।পর্দার বিধানের পূর্ণ অনুসরণ অপরিহার্য করা হয়েছে বরং তাদের পবিত্রতা ও সতীত্ব রক্ষার্থে তাদের উপর ।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা'আলা বলেন , আল্লাহ তো কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতাকে দূরীভূত করতে এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে ।(সূরা আহযাবঃ৩৩)
বিশেষভাবে উম্মতের নারীদের জন্য অনেক বড় ইহসান পর্দার বিধান ইসলামী শরীয়তের পক্ষ থেকে সাধারণভাবে সমাজ ব্যবস্থা জন্য । ইসলামী শরীয়তের যথার্থতা , পূর্ণাঙ্গতা মূলত এই বিধানটি এবং এক প্রচ্ছন্ন দলিল । পর্দার বিধানের কোন বিকল্প নেই মানব সমাজকে পবিত্র ও শৃঙ্খলাবদ্ধ রাখতে ।

পর্দা-পরিচিতি

ফার্সি মূলত পর্দা শব্দটি । হিজাব আরবি প্রতিশব্দ । পর্দা বা হিজাবের এর বাংলা অর্থ হচ্ছেঃ ঢেকে রাখা , অন্তরায় , আড়াল , আবরণ , বস্ত্র দিয়ে সৌন্দর্য ঢেকে রাখা , গোপন করা ইত্যাদি । শরীয়ত কৃত্তক ইসলামী পরিভাষায় পর্দা বলা হয়ে থাকে নারী-পুরুষ উভয়ের চারিত্রিক পবিত্রতা অর্জনের জন্য তাদের মাঝে যে আড়াল বা আবরণ রয়েছে তাকে ।

আবার অনেকে বলে থাকেন নারী তার বাহিক ও অন্তরের সৌন্দর্য অন্য পুরুষের দৃষ্টি থেকে আড়ালে রাখা যে বিশেষ ব্যবস্থা ইসলাম প্রণয়ন করেছে তাকে পদ্মা বলা হয়ে থাকে ।

শুধু পোশাকের আবরণী মূলত হিজাব বা পর্দা নয় সমাজ ব্যবস্থায় নারী ও পুরুষের মধ্যে যাতে অপবিত্র অবৈধ সম্পর্ক তা ছাড়া নারীর প্রতি পুরুষের যে অত্যাচারী আচরণ তার রোধের বিভিন্ন ব্যবস্থা রয়েছে।

পর্দার- বিধান কুরআন মাজিদে

একটি অকাট্য বিধান পর্দার বিধানটি ইসলামের । এই বিধান দেওয়া হয়েছে কুরআন মজীদের অনেকগুলো আয়াতে । হালকা মনে করার সুযোগ নেই কোন ঈমানদারের পক্ষে এই বিধানকে । নিম্নে কয়েকটি আয়াত সংক্ষিপ্তভাবে আলোচনা সহ করা হলোঃ

১. অর্থঃ হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীগণকে , কন্যা গনকে ও মুমিনদের নারীগণকে বলুন , তারা যেন তাদের চাদরের কিছু অংশ নিজেদের ওপর টেনে দেয় । সহজ হবে এতে তাদের চেনা । উত্যক্ত করা হবে না ফলে তাদের ওপর । আল্লাহ ক্ষমাশীল , পরম দয়ালু ।(সূরা আহযাবঃ৫৯)

২.অর্থঃ তোমরা তাদের (নবী পত্নীদের) নিকট কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাও । অধিকতর পবিত্রতার কারণ এই বিধান তোমাদের ও তাদের হৃদয়ের জন্য। তোমাদের কারো জন্য আল্লাহর রাসূলকে কষ্ট দেওয়া উচিত নয় এবং তার মৃত্যুর পর তার পত্নীদেরকে বিবাহ করা তোমাদের জন্য কখনো বৈধ নয় । কঠিনতম অপরাধ আল্লাহর দৃষ্টিতে এটা ।(সূরা আহযাব(৩৩) ঃ৫৩)

এই আয়াত থেকে বোঝা যায় পর্দার বিধানের বাহিরে নয় নারীর দেহের কোন অংশই । এটা প্রমাণ করে উম্মুল মুমিনি গণের আমল ।

এই আয়াতে পর্দার বিধানকে যখন সাহাবায়ে কেরাম ও উম্মুল মুমিনীনদের জন্য অধিকতর পবিত্রতার উপায় বলা হয়েছে । এই বিধানের বাইরে থাকতে পারে উম্মতের আর কে আছে?

৩.অর্থঃ(হে নবী) মমিন নারীদেরকে বলুন , তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে ও তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে । তারা যেন সাধারণত যা প্রকাশ থাকে তাছাড়া নিজেদের আবরণ প্রদর্শন না করে ।(সূরা নূরঃ৩১)

৪.অর্থঃ তারা যেন গ্রীবা ও বক্ষদেশ মাথার কাপড় দ্বারা আবৃত করে ।(সূরা নূরঃ৩১)

৫.অর্থঃ তারা যেন তাদের গোপন আভরণ প্রকাশের উদ্দেশ্যে সজোরে পদক্ষেপ না করে । হে মুমিনগণ! তোমরা সকলে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন কর , যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো ।(সূরা নূরঃ৩১)

এই আয়াত থেকে বোঝা যায় এমন সব কাজ থেকে বিরত থাকা ঈমানদার নারীর কর্তব্য যা পরপুরুষকে আকৃষ্ট করে । সহজেই বোঝা যায় আল্লাহতালা পর পুরুষের সামনে নুপুরের আওয়াজ শোনালো বা সজোরে পদক্ষেপ নিষেধ করা হয়েছে । তাছাড়া বেশি আকৃষ্ট করে সে সকল কাজ ভঙ্গি ও আচরণ নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন ।

পর্দা বিধান হাদীস শরীফে

১.আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এরশাদ করেন ,

নারী হলো আবৃত থাকার বস্তু । শয়তান তাকে মনোযোগ দিয়ে দেখতে থাকে সে যখন ঘর থেকে বের হয় তখন । সে আল্লাহতালার সবচেয়ে বেশি নিকটে থাকে সে যখন গৃহবান্তরে অবস্থান করে । বিনা প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হওয়া উচিত নয় এই হাদিস দ্বারা প্রতীয়মান হয় ।

২.আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা থেকে বর্ণিত , রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-

ইহারাম গ্রহনকারী নারী যেন নেকাব ও হাতমোজা পরিধান না করে ।( সহীহ বুখারী ৪/৬৩ , হাদিসঃ১৮৩৮)

কাজী আবু বকর ইবনে আরাবি বলেন , নারীর জন্য বোরকা দ্বারা মুখমন্ডল আবৃত করা ফরজ । এর ব্যতিক্রম তবে হজের সময়টুকু । হজের সময় তারা ওড়নাটা চেহারার উপর ঝুলিয়ে দেবে মিলিয়ে রাখবে না চেহারার সাথে । নিজেদেরকে দূরে রাখবে পরপুরুষ থেকে এবং তাদের থেকে দূরে থাকবে পুরুষরাও । আরিজাতুল আহওয়াযী৪/৫৬)

৩.হযরত আয়েশা রাঃ হাদিসে বলেছেন-আমি আমার স্থানে বসে ছিলাম একসময় আমার চোখ দুটি নিদ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়ল এবং আমি ঘুমিয়ে পড়লাম । সাফওয়ান ইবনে মুয়াত্তাল আসসুলামী ছিল বাহিনীর পিছনে আগমন কারী । সে যখন আমার অবস্থানস্থলের নিকট পৌছলো তখন একজন ঘুমন্ত মানুষের আকৃতি দেখতে পেল ।

এরপর সে আমার নিকট এলে আমাকে চিনে ফেলল । কারণ পর্দা বিধান অবতীর্ণ হওয়ার আগে সে আমাকে দেখেছিল । সে তখন ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন বলে ওঠে যার কারণে আমি ঘুম থেকে জেগে উঠি এবং ওড়না দিয়ে নিজেকে আবৃত করে ফেলি ।(সহীহ বোখারী৫/৩২০; সহীহ মুসলিম হাদিস;২৭৭০)

৪.উম্মুল মুমিনিন আয়েশা রা-বলেন আমরা যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে ইহারাম অবস্থায় ছিলাম তখন আমাদের পাশ দিয়ে অনেক কাফেলা অতিক্রম করতো । যখন তারা আমাদের সামনাসামনি চলে আসতো তখন আমাদের সকলেই চেহারার উপর ওড়না টেনে দিতাম । তারা চলে গেলে আবার তা আসলে নিতাম ।(মুসনাদে আহমাদ৬/৩০; ইবনে মাজাহ ,
পর্দার গুরুত্ব
পর্দার গুরুত্ব সম্পর্কে আল্লাহতালা বলেন হে নবী আপনি আপনার স্ত্রী কন্যা ও মমিন নারীদেরকে বলুন তারা যেন তাদের ওড়নার একাংশ নিজেদের উপর টেনে দেয় । সহজ হবে এতে করে তাদেরকে চেনার । ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না । আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু ।(সূরা আহযাব;৫৯)

এই আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে পর্দার সঙ্গে চলাফেরা করার গুরুত্ব । সবাই বুঝতে পারবে যে তারা চরিত্রবতী নারী পর্দার সহিত চলাফেরা করলে । কেউ উত্ত্যক্ত করার সাহস করবে না পর্দানশীল নারীদেরকে ।
তারাই ইভটিজিং ও ধর্ষণ সহ নানা রকমের নির্যাতনের সম্মুখীন হয় এবং রাস্তাঘাটে তারাই বেশি ঝামেলায় পড়ে প্রকৃতপক্ষে যারা পর্দাহীন ভাবে চলাফেরা করে । পর্দার গুরুত্ব অপরিসীম নারীর সতীত্ব ও ইজ্জত রক্ষার্থে ।

পর্দা হীনতার পরিণতি

আল্লাহতালা নারী ও পুরুষের মাঝে পদ্মার বিধান রেখেছেন । নারীদের উপর পরপুরুষ থেকে পর্দা করা ফরজ করেছেন । নারীর কল্যাণের জন্যই রাখা হয়েছে পদ্মার বিধান । পর্দার বিধান যদি না রাখা হতো তাহলে নারী-পুরুষ অবাধ মেলামেশার কারণে অসংখ্য দুর্ঘটনা ঘটতো সমাজে ।
সমাজকে কুলুষিত করে এবং সমাজের ফেতনা-ফাসাদ বৃদ্ধি করে নারী ও পুরুষের অবাধ মেলামেশা । রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেন , আমার পর আমি পুরুষের জন্য নারীর ফেতনার চেয়ে অধিক ক্ষতিকারক কোন ফেতনা রেখে যায়নি । বড় ফেতনা হচ্ছে নারীর ফেতনায় ।

এজন্যই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার উম্মতকে নারীদের বিষয়ে অধিক সতর্ক করেছেন । পর্দার বিধান রেখেছেন ফিতনা থেকে বেঁচে থাকার জন্য ।

পর্দা হীনতার কারণে ঘৃণিত কর্মের সূত্রপাত হয় পরকীয়া ও চরিত্রহীনতার মত । বিশ্বাস উঠে যায় স্বামী স্ত্রী পরস্পরের প্রতি । এতে করে অশান্তি ও বিপর্যয় নেমে আসে পরিবারে । জগতের সবচেয়ে নিকৃষ্ট নারী মূলত পর্দাহীন নারীরা । তাদের ব্যাপারে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেন , তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট তারায় যারা পর্দাহীন ভাবে চলাফেরা করে ।

এ প্রসঙ্গে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন দুই শ্রেণীর জাহান্নামিদের আমি দেখিনি(পরবর্তী সময়ে সমাজে তাদের দেখা যাবে)।

১.এমন সম্প্রদায় , যাদের হাতে গরুর লেজের মত চাবুক থাকবে , আর সেই চাবুক দিয়ে তারা মানুষকে প্রহার করবে ।

২. এ মন নারী , যারা পোশাক পরিধান করার সত্ত্বেও নগ্ন । নিজেরাও অন্যদের প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং অন্যদেরকে তাদের প্রতি আকৃষ্ট করে । তাদের মাথা হবে উটের ঢেলে পরা কুজের মত । তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না , এমনকি জান্নাতের সুঘ্রাণ ও পাবে না ।(মুসলিম৫৪৪৫)
যেভাবে পর্দা পালন করতে হবে
তিনটি পর্যায়ে রয়েছে একজন নারীর পর্দা পালনের । গৃহে অবস্থানকালীন পর্দা, বাইরে গমন কালীন পর্দা , এবংবৃদ্ধা অবস্থায় পর্দা । প্রত্যেকটি পর্যায়ে পর্দা রক্ষা করে চলতে হবে কুরআন সুন্নাহর নির্দেশনা অনুযায়ী । নিম্নে এই তিনটি পর্যায় সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ

গৃহে অবস্থানকালীন পর্দাঃ গৃহ হচ্ছে নারীর প্রধান আবাস স্থল । সাধারণত নারীর জন্য শোভনীয় গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান করা । তাদের গৃহবান্তরে অবস্থান নির্দেশ দিয়েছেন এজন্য আল্লাহতালা নারীদেরকে । আল্লাহতালা আরো বলেন তোমরা গৃহবান্তরে অবস্থান করো নিজেদেরকে প্রদর্শন করো না প্রাচীন জাহিলি যুগের নারীদের ন্যায় ।(সূরা আহজাব;৩৩)

আল্লাহতালার কাছে সে ততই প্রিয় হয়ে ওঠে যে নারী নিজেকে সংযত ও আবৃত রাখে । তার মর্যাদা ও ব্যক্তিত্ব ততই উচ্চতর হয়ে ওঠে ইসলামের দৃষ্টিতে । আল্লাহ তা'আলা বলেন যখন তোমরা তাদের(নবী পত্নীদের) কাছে কিছু চাইবে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে । এ বিধান তোমাদের ও তাদের অন্তরের জন্য অধিকত পবিত্রতার কারণ ।,(সূরা আহজাব;৫৩)

এই আয়াতে বিশেষভাবে নবী পত্নীদের কথা উল্লেখ থাকলেও এ বিধান সমগ্র উম্মতের জন্য ব্যাপকভাবে প্রয়োজন । এই বিধান থেকে বোঝা যায় ভিন্ন পুরুষদের ব্যবহৃত বস্ত্র , পাত্র বস্ত্র ইত্যাদি নেওয়া জরুরী হলে নেবেনা সামনে এসে তারা পর্দার আড়াল থেকে চেয়ে নেবে ।

এই নির্দেশনা থেকে বোঝা যায় যে গৃহ অবস্থানকালীন মুহূর্তেও পরপুরুষ , নিকট আত্মীয় বা দৌরাত্মীয় সকলের কাছ থেকে পর্দার আড়ালে অবস্থান করবে । খুব প্রয়োজন হলে পর্দার আড়াল থেকে কথা বলবে এবং পুরুষরাও পর্দার আড়াল থেকে কথা বলবে ।

বাইরে গমন কালীন পর্দাঃ নারীদের জন্য গৃহের বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন আছে। প্রয়োজনে নারীকে বাইরে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন এজন্য ইসলাম । একটি সর্বাঙ্গীণ ও পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা মূলত ইসলাম । ইসলামে বিবেচিত হয়েছে তাই মানব প্রয়োজনে সকল দিকে ।

বাইরে বের হতে হবে এক্ষেত্রে পর্দাবৃত হয়ে । বাইরে বের হওয়া যাবেনা কিছুতেই পর্দাহীনভাবে । বিশ্বনবীর সাঃ বলেন নারী যখন পর্দাহীন ভাবে বাইরে বাহির হয় শয়তান তখন তার দিকে উঁকি মেরে তাকায় ।(তিরমিজি;১১৭৩)

পর্ন পর্দা পালনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে পবিত্র কোরআন শরীফে নারীদেরকে বাইরে গমন কালীন মর্হুতে। আল্লাহতালা সুস্পষ্ট নির্দেশ দেনহে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীগণকে , কন্যা গনকে ও মুমিনদের নারীগণকে বলুন , তারা যেন তাদের চাদরের কিছু অংশ নিজেদের ওপর টেনে দেয় । সহজ হবে এতে তাদের চেনা । উত্যক্ত করা হবে না ফলে তাদের ওপর । আল্লাহ ক্ষমাশীল , পরম দয়ালু।(সূরা আহযাব;৫৯)

এই আয়াতে বাহিরে গমনের সময় হিজাবের একাংশ মাথার উপর দিতে বলা হয়েছে । বাইরে গমনের সময় হিজাব পরিধান করে আপাদমস্তক আবৃত করে বের হওয়া আবশ্যক ।

বৃদ্ধা অবস্থায় পর্দাঃ কিছুটা শিথিলতা গ্রহণের অবকাশ রয়েছে বয়স্ক মেয়েদের জন্য পর্দা পালনের ক্ষেত্রে । এ সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলা বলেন , অতিশয় বৃদ্ধা নারী , যারা বিবাহের আশা রাখেনা , অপরাধ নেই তাদের জন্য তাদের অতিরিক্ত বস্ত্র খুলে রাখেন এবং তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে । বিরত থাকাই তাদের জন্য উত্তম এ থেকে । আল্লাহ সর্বশ্রোতা , সর্বজ্ঞ ।(সূরা নূর;৬০)

এই আয়াতের নির্দেশনা হল তার জন্য পদ্মার বিধান শিথিল করা হয়েছে যে বৃদ্ধা নারীর প্রতি কেউ আকর্ষণ বোধ করেনা এবং সে বিবাহের অযোগ্য । তার কাছে মাহরামের ন্যায় হয়ে যায় গাইরে মাহরাম ব্যক্তি ও । মাহরামদের কাছে যেসব অঙ্গ আবৃত করা জরুরি নয় । বৃদ্ধা নারীদের জন্য পুরুষদের কাছেও সেগুলো আবৃত্ত করা জরুরি নয় ।

বৃদ্ধা নারীর জন্য বলা হয়েছে মাহরাম পুরুষদের সামনে যেসব অঙ্গ খুলতে পারবে গায়রে মাহরাম পুরুষদের সামনে সেসব অঙ্গ খুলতে পারবে ।(তাফসীরে মা আরেফুল কুরআন;৬/৪৩৯)

এ বিধান রয়েছে শুধু চরম বার্ধক্যের কারণে যে সকল বিবাহের উপযুক্ত নয় ও তাদের প্রতি কারো আকর্ষণ সৃষ্টি হয় না এ ধরনের নারীর জন্য ।গায়রে মাহরাম পুরুষদের সামনে অন্যান্য নারীদের যেমন আপাদমস্ত ঢেকে রাখতে হয় তাদের জন্য তা জরুরি নয় ।

তারা যদি বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করে এবং অন্যান্য নারীদের মতো তারাও পর পুরুষের সামনে পুরোপুরি পর্দা রক্ষা করে চলে তবে সেটাই তাদের জন্য উত্তম ।
যাদের সাথে পর্দা নেই
নারীর পর্দা নেই মাহরাম পুরুষের সাথে । মাহরাম পুরুষ যারা বুঝায় এমন পুরুষ আত্মীয় যার সাথে বর্তমানে কিংবা ভবিষ্যতে কোন অবস্থায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া জায়েজ নয় । যেমন-পিতা , ভাই ইত্যাদি । যাদের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ জায়েজ তারা হলোঃ
  • স্বামী ।
  • স্বামীর পিতা , দাদা যত উপরে যাক ।
  • আপন পিতা , দাদা ।
  •  আপন ভাই , বিমাতা ভাই ।
  • সতীনের ছেলে ।
  • আপন মামা ।
  • আপন চাচা ।
  • আপন ছেলে ।
  •  আপন ভাইয়ের ছেলে ।
  • আপন ভোগ্নির পুত্র ।

যাদের সাথে নারীদের দেখা করা জায়েজ নেই

নারীদের রক্তের সম্পর্কহীন যেকোনো বেগানা পুরুষ-নিজ গ্রামের লোক হোক বা অন্য গ্রামের এবং স্কুল কলেজ ভার্সিটি কিংবা সহপাঠী অফিসে চাকরি করুক না কেন তারা গাইরে মাহরাম ।
উকিল বাপ , ধর্ম বাপ , ধর্ম ভাই , মামা-চাচা , শিক্ষক পীর প্রমুখ গাইরে মাহরাম ।
দুলাভাই ।
খালু ভাসুর ও ভাসুরের ছেলে ।
দেবর ও দেবরের ছেলে ।
ননদের সামনে ও তার ছেলে ।
চাচার ছেলে/চাচাতো ভাই ।
জ্যাঠাতো ভাই ।
মামার ছেলে/মামাতো ভাই ।
স্বামীর অন্য যত প্রকারের ভাই বা দুলাভাই আছে ।
উপরের সকলেই বেগানা তাদের সাথে পর্দা করা ফরজ ।

লেখকের মন্তব্য

প্রিয় পাঠক আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনারা জানতে পেরেছেন পর্দা ও হিজাব সম্পর্কে । আমাদের সবারই মনে রাখতে হবে নারীদের যেমন পর্দা করা ফরজ তেমনি তাদেরকে পর্দা মত চলতে সুযোগ দেওয়া পুরুষের উপর ফরজ । নারীদেরকে পর্দায় রাখা যেসব পুরুষরা নারীদের অভিভাবক তাদের জন্য ফরজ । প্রিয় পাঠক আপনার এবং আপনার পরিবারের সুস্বাস্থ্য কামনা করে এখানেই শেষ করছি আল্লাহ হাফেজ ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url