করলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা জেনে নিন

 
এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা করলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করব । প্রিয় পাঠক বন্ধুরা নিশ্চয় আপনারা অনেক ভাল আছেন। ত্বক ভালো রাখার জন্য করলার জুরি হয় না, করলাই থাকা উপাদান ভিটামিন ও মিনারেল সব ভালো রাখার পাশাপাশি মুখের ব্রণ ম্যাজিক এর মত সরিয়ে দেয়। একটি গবেষণায় দেখা গেছে করলার রস পাকস্থলী, ফুসফুসের ক্যান্সার কোষগুলিকে ধ্বংস করতে সহায়তা করে। আরেকটি গবেষণায় প্রমাণ পাওয়া গেছে  করলা খেলে স্তন ক্যান্সার থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।


(করলা, উচ্ছা,উচ্ছে) এক প্রকার  সবজি । ইংরেজিতে একে Balsam pear, alligator pear, bitter, gourd, bitter melon, bitter cucumber ইত্যাদি বলা হয়। এর বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে Momordica charantia, যা Cucurbitaceae এটা বাসা বাড়ির অন্তর্ভুক্ত একটি সবজি ।

পোস্ট সূচিপত্র: করলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা জেনে নিন 

ভূমিকা-করলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা জেনে নিন


করলা খেতে তেঁতো হলেও অনেকেই এইসবজি পছন্দ করে থাকেন । অনেেই করলার  ভাজি , ভর্তা, করে খেয়ে থাকে । রুচিবর্ধক সবজি করলা । করলার ভাজি ,ভাজা - রান্না যেভাবেই হোক ডালের সঙ্গে করলার স্বাদ সমান । গরম ভাতের সাথে করলা ও ছোট আলুর ভাজি খাবারকে আনন্দময় করে তোলে। চৈত্র সংক্রান্তিতে করলা বা তেঁতো খাবার খাওয়া বাঙ্গালীদের শত বছরের ঐতিহ্য। করলার ভেতরে যে ঔষধি গুণ আছে তা বলে শেষ করা যাবে না। 

নিয়মিত করলা খেলে রোগবালায় দূরে পালাবে। করলা নিয়মিত কেন খাবেন সে সম্পর্কে ল্যাবএইড কার্ডিয়াক বিভাগের শ্রেষ্ঠ পুষ্টিবিদ ফাহমিদা হাসেম বলেন, করলা অতিরিক্ত গরমের সময় স্বস্তি দেয়, এবং শরীর সুস্থ রাখে।  ১০০গ্রাম করলায় আছে ৯২ দশসিক ২ গ্রাম জলীয় অংশ , ২৮ কিলোক্যালরি, ২ দশমিক ৫ গ্রাম আমিষ , ৪ দশমিক ৩ গ্রাম র্শকরা , ১৪ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম ,৬৮ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি এবং ১ দশমিক ৮ মিলিগ্রাম লোহা ।

করলার উপকারিতা

করলা খাওয়ার ক্ষেত্রে করলার উপকারিতা সম্পর্কে আমাদের জানা দরকার । করলা খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং শরীরকে বিভিন্ন সংক্রমনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। রক্তের চিনি কমানোর জন্য উপাদান রয়েছে করলাই । ডায়াবেটিস রোগীরা রক্তের চিনির পরিমাণ কমাতে নিয়মিত করলা খেতে পারেন। মধু ও পানির সঙ্গে মিশিয়ে খেলে ব্রঙ্কাইটিস, অ্যাজমা, শ্বাসকষ্ট ও গলার প্রদাহের উপকার পাওয়া যায়। করলা সবজির কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নাই।

চীনের বিখ্যাত চিকিৎসক লি সেনঝেন এ তথ্য জানিয়ে গিয়েছিলেন ষোড়শ শতকের দিকে। করলা শরীর থেকে গরম বের করে দেয়। করলা শরীরকে ঠান্ডা রাখতে সহায়তা করে থাকে । করলা স্বাদবিহীন একটি সবজি যা শ্রান্তি - ক্লান্তি দূর করে। দেবী অহল্যা ইউনিভার্সিটিতে ২০০৮ সালে করলার পাশাপাশি ডায়াবেটিসের ঔষধ হিসেবে খাওয়ানোর পর দেখেন ঔষধের মতো করলায় গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। হাফডোস ওষুধের সক্রিয়তা বৃদ্ধি কর ফুলডোস তৈরি করে দিচ্ছে। 

এই পরীক্ষা ৫২ থেকে ৬৫ বছর মানুষদের উপর করা হয়েছিল । করলার রস খাওয়ানোর পাশাপাশি মেটফরমিন বা গ্লিবেনক্ল্যামাইড খাওয়ানো হয়েছিল। আয়ুর্বেদে ডায়াবেটিস রোগীদের নিয়মিত করোলা খাওয়ার কথা বলে থাকলেও এতদিন আবছা একটি ধারণা থেকে ডায়াবেটিস রোগীদের করলা খাওয়ার কথা বলা হত। 

এবার সে অস্বচ্ছতা দূর হলো। যাদের ডায়াবেটিস টাইপ টু, আবার যারা টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিসের রোগী তাদের জন্য করলা রস প্রযোজ্য। করলার রস গ্যাস্টিকের সমস্যায় উপকারী। করলার রস এইডসের মরণ ভাইরাসকে দ্রুত হারে বৃদ্ধি পেতে দেয় না। এজন্য ওষুধের পাশাপাশি বেশি বেশি করলা রস খেতে বলা হয়েছে। করলার রস হজম শক্তি বৃদ্ধি করে এবং পিত্তরস বাড়িয়ে দিয়ে চর্বির বিপাকক্রিয়া তন্দুরস্ত করে ফেলে । 

করোলা খেলে গ্যাস্টিকের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। কোষ্ঠকাঠিন্য এবং বদহজম এর ক্ষেত্রে করলা উপকারী। আয়ুর্বেদে বলা আছে করলা বা উচ্ছাপাতার রস খেলে মধ্যাসক্তি কমে, অর্শে উপকার পাওয়া যায়, কলেরার সময়ও উপকার পাওয়া যায়। মেয়েদের যদি ঋতুস্রাবের সমস্যা থাকে সেক্ষেত্রে মেয়েদের ঋতুস্রাবের কষ্ট লাঘব করে। আবার হাই পার টেনশন তথা হাই ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ রাখতে সহায়তা করে। করলা খেলে খিদে বাড়ায় এবং শরীর গরম হবে না।

করলার অপকারিতা

করলা খেলে শুধু উপকার হয় না । তার অপকারিতা রয়েছে তা এখন জানব।  যেমন-
  • করলা খেলে রক্তের শর্করার পরিমাণ কমে যেতে পারে এজন্য যাদের শর্করার সমস্যা রয়েছে তাদের চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এটি গ্রহণ করা উচিত।
  • বিশেষ করে এলার্জি আক্রান্ত ব্যক্তিদের করল্লায় এলার্জি হতে পারে, তাই তাদের চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করতে হবে।
  • করলা খেলে গর্ভপাতের ঝুঁকি বেড়ে যায়। গর্ভবতী মহিলার স্বাস্থ্যের জন্য অত্যাধিক পরিমাণে তিতা করলা খেলে মাসিকের প্রদাহ বৃদ্ধি পেতে পারে এবং গর্ভনিরোধক প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে। আবার খিচুনিতে আক্রান্ত হতে পারে, এইভাবে গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ায়।
  • বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য করল্লা খাওয়া খুবই উপকারী এবং উচ্চ রক্তচাপ শর্করা মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে । তবে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ওষুধের সাথে তিতা গ্রহণ করলে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে।
  • করলা শিশুদেরকে খাওয়ালে , শিশুদের পেটে ব্যথা বমি ভাব পেট ফাঁপা রোগে আক্রান্ত হতে পারে শিশুদের জন্য এটা বিষক্রিয়া হতে পারে।
  • হিপগ্লিসেমিক কমে যেতে পারে, আমাদের দেহে অত্যন্ত কম রক্তের শর্করার মাত্রা দিয়ে অনুপ্রাণিত এক ধরনের কুমা তৈরি করে থাকে ।
  • লিভার ইনফ্লামেশন হতে পারে। শরীরের রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণের সহায়তা করে এজন্য ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খরচ কম হয়। যাইহোক, গবেষণায় দেখা গেছে তিতা করলা বেশি খেলে লিভার এনজাইমকে উন্নত করে লিভারের প্রধান সৃষ্টি করতে পারে।

করলার জুসের উপকারিতা

করলা খেতে বেশ হলেও করলা জুসের উপকারিতা অনেক । তা বলে শেষ করা যাবে না। করলা মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। সবুজ রঙের একটি করলা  কেটে তার বিচিগুলো প্রথক করে নিন এবং ছোট ছোট করে কেটে নিতে হবে। কাটার পর এই কাটা করলা ঠান্ডা লবণ পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। এতে করলার  তেঁতো ভাব কমে যাবে। 

এরপর ভালোভাবে ব্লেন্ড করে জুস করে নিন। শুধু এই রস খেতে পারেন অথবা ঠান্ডা পানির সাথে মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। প্রতিদিন সকালে এই রস খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এতে করে ভালো উপকার পাবেন। শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য কাঁচা করলার জুস অনেক উপকারী। আসুন এর উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেই-
  •  কাঁচা করলার জুস খাওয়ার ফলে শরীরের ওজন কমতে শুরু করে।
  • খুব দ্রুত খাবার হজম করতে সাহায্য করে।
  • করলার জুস শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে ।
  • করলায় রয়েছে বৃটা ক্যারোটিন নামুখ উপাদান যা চোখের দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য করলার জুস খাওয়া দরকার।
  • চুল ও ত্বকের উজ্জ্বলতায় করলার জুস কার্যকরী।
  • এলার্জি এজমা কমাতে সাহায্য করে করলার জুস।

করলা চাষ পদ্ধতি

করলা সাধারণত পরিবার ভুক্ত বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান সবজি। স্বাদেরদিক দিয়ে তেঁতো হলেও বাংলাদেশের সকলের নিকট এটি প্রিয় সবজি হিসেবে বিবেচিত। করলার অনেক ঔষধি গুণ রয়েছে। এর রস বহুমুত্র, চর্মরোগ, বাত এবং হাঁপানি রোগের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়।

জমিও মাটির বর্ণনা: উষ্ণ এবং আদ্র আবহাওয়া করলা ভালো হয়। পরিবেশগতভাবে এটি একটি কষ্ট সহিষ্ণু উদ্ভিদ । মোটামুটি শুষ্ক আবহাওয়াতে একটি ভালোভাবে চাষ করা যায়, যদি অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত হয় তাহলে করলা চাষে  অধিক ক্ষতি কর। অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত হওয়ার ফলে এ পরাগায়ন হতে পারে না । তাই শীতের দুই এক মাস সময় বাদ দিয়ে বছরের যে কোন সময় করলা জন্মানো যায়। বিশেষ করে শীতকালে গাছের বৃদ্ধির হার কমে যায়। 

ভালো ফলন পেতে হলে যেখানে ভালো রোদের ব্যবস্থা আছে, ভালোভাবে শেষ দেওয়া যায় এমন জমি করলা চাষের জন্য নির্বাচন করা উচিত। তবে সব ধরনের মাটিতে করলা চাষ করা সম্ভব, তবে জৈব সার সমৃদ্ধ দো আশ মাটিতে ভালো জন্মায়। করলা সারা বছর চাষ করা যায়। লবণাক্ত মাটিতে উঁচু বেড তৈরি করে চাষ করা যায়।

জমি তৈরি: করলা চাষ পদ্ধতি হলো শুকনো মৌসুমে চাষ হয় বলে করলার জন্য এমন স্থান নির্বাচন করতে হবে যেখানে পানি জমার সম্ভাবনা নেই। বসত বাড়িতে করলা চাষ করার জন্য দু চারটি মাদাই বীজ বুনে কাজ বেড়ে উঠতে পারে এমন ব্যবস্থা করলেই চলে। তবে বাণিজ্যিকভাবে চাষের জন্য জমি ৪-৫ বার চাষ ও মই দিয়ে প্রস্তুত করে নিতে হয় যাতে শিকড় সহজেই ছড়াতে পারে। জমি বড় হলে নির্দিষ্ট দূরত্বে নালা কেটে লম্বায় কয়েক ভাগে ভাগ করে নিতে হয়। বেডের প্রশস্ততা হবে ১.০ মিটার এবং দু - বেডের মাঝে ৩০ সেমি নালা থাকবে।

করলা পাতার উপকারিতা

করোলা পাতা লিভারের জন্য মহা ঔষধ। শরীর থেকে অতিরিক্ত টক্সিন বের করে দেয় করলা পাতা। যদি ডায়রিয়া হয় সেক্ষেত্রেও করালা পাতা রস অনেক উপযোগী। অ্যাজমা বঙ্কাইটিস ফ্যারেনজাইটিস এর মত সমস্যা কমাতে সাহায্য করে করলো পাতার রস।

পাঠকের মন্তব্য ও শেষ কথা

উপরের আলোচনা থেকে আমরা করলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে পারলাম। করলা খেতে তেঁতো হলেও অনেকের কাছে এটা অনেক প্রিয় সবজি । করলার কদর বেশি হয়ে থাকে ভাজি , ভর্তার, ক্ষেত্রে । রুচিবর্ধক সবজি করলা । ডালের সঙ্গে করলার ভাজি ,ভাজা - রান্না যেভাবেই হোক করলার স্বাদ সমান । গরম ভাতের সাথে করলা ওছোট আলুর ভাজি খাবরকে আনন্দময় করে তোলে। চৈত্র সংক্রান্তিতে করলা বা তেতো খাবার খাওয়া বাঙ্গালীদের শত বছরের ঐতিহ্য।




























এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url