গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা জেনে নিন

আমি আজকে এই আর্টিকেলে আলোচনা করতে যাচ্ছি। গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা সম্পর্কে। গর্ভবতী অবস্থায় কি খাবার খাবেন বা কি খাবার খাবেন না এসব বিষয় নিয়ে এই আর্টিকালে আজকের আলোচ্য বিষয়। আপনি মা হতে চলেছেন এ জন্য আপনাকে অত্যন্ত অভিনন্দন। আপনার অনাগত সন্তান নিয়ে আনন্দের সঙ্গে আপনার মনে অনেক প্রশ্ন আসতে পারে। তার মধ্যে একটি প্রশ্ন বেশি ঘুরপাক খেতে থাকে। তাহলো গর্ভাবস্থায় আপনি কি খাবেন বা গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা কি হবে।
গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা জেনে নিন
আপনার জীবনের সব পর্যায়ে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়াটা আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু গর্ভাবস্থায় স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া আপনার জন্য বিশেষভাবে জরুরী। গর্ভাবস্থায় যদি আপনি সুষম খাবার খান, খাওয়ার ফলে আপনার সন্তানের বেড়ে ওঠা জন্য, তার বিকশিত হওয়া জন্য এবং সন্তানের সঠিক ওজন বারার জন্য সহায়তা করে।

পোস্ট সূচিপত্রঃ গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা জেনে নিন

ভূমিকাঃ গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা জেনে নিন

গর্ভাবস্থায় প্রথম সতর্কতা গর্ভবতী মায়েদেরকে সব সময় একটু আলাদা যত্ন রাখতে হয় এবং সাবধানে রাখতে হয়। একজন মা গর্ভবতী হওয়ার পর সন্তান ভূমিষ্ঠ না হওয়া পর্যন্ত এই সময়ে তার মায়ের গর্ভে সন্তান বেড়ে ওঠার জন্য যে যত্ন নেওয়া হয় তাকে গর্ভকালীন যত্ন বলে। এই গর্ভকালীন অবস্থায় যত্ন নেওয়ার মেন উদ্দেশ্য হল মায়ের সুস্বাস্থ্য ঠিক রাখা এবং শিশুর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা। 
গর্ভকালীন সময় যেন জটিলতা দেখা দিতে না পারে তার জন্য প্রতিরোধ ব্যবস্থা এবং চিকিৎসা করা। তাই গর্ভকালীন অবস্থায় মায়ের স্বাস্থ্যের কোন অবনতি যেন না হয় সেদিকে খেয়াল রেখে সুস্থ শিশু উপহার দেওয়ায় গর্ভকালীন যত্নের মূল লক্ষ্য । তাই আমি এই আর্টিকেলে গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি।

গর্ভবতী মায়ের দৈনিক খাদ্য তালিকা

গর্ভকালীন সময়ে মায়েদেরকে বিভিন্ন রকম পুষ্টিকর খাবার খেতে হয়। যাতে করে মায়ের ও সুস্বাস্থ্য ঠিক রাখা এবং বিকশিত হতে দেওয়া, শিশুর ওজন বৃদ্ধির সহায়তার জন্য গর্ভকালীন অবস্থায় গর্ভবতী মায়ের দৈনিক খাদ্য তালিকায় যেসব খাবার রাখা দরকার হবে । তা নিন্মরুপ-দুগ্ধজাত খাবার, ফল জাতীয় খাবার, ডিম ও মুরগি গোস্ত, বিভিন্ন রকম মাছ, বাদাম ও 

বীজ জাতীয় খাবার , শাকসবজি, কড লিভার অয়েল, জিং, প্রোটিন যুক্ত খাবার , আয়োডিনযুক্ত লবণ খেতে হবে , ফলিক এসিড, আয়রন যুক্ত খাবার , ক্যালসিয়াম, ফাইবার যুক্ত খাবার , ভিটামিন সি যুক্ত খাবার, ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার, ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার, ডি এইচ এ সমৃদ্ধ খাবার, এই খাবারগুলো গর্ভবতী মায়ের দৈনিক খাদত তালিকায় রাখা একান্ত জরুরি।

গর্ভবতী মায়ের খাদ্য ও পুষ্টি

স্বাভাবিকভাবে একটি শিশু ৯ মাস ১০ দিন অথবা শিশু ২৮০ দিন মাতৃগর্ভে বেড়ে ওঠার পর পৃথিবীতে আসে এবং আলোর মুখ দেখতে পায়। এ সময় মাতৃগর্ভে বেড়ে ওঠার জন্য বা সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সবকিছু নির্ভর করে মায়ের কাছে থেকে পুষ্টি পাওয়ার উপর। মায়ের গর্ভে থাকাকালীন পর্যাপ্ত পরিমাণে যদি খাবার না পেয়ে থাকে বা খাদ্য গ্রহণ না করে তাহলে শিশুর জন্মগ্রহণের পর পুষ্ট হবে না। রক্তশূন্যতা দেখা দিতে পারে  ,আমিষের খাবারের অভাবের জন্য দূর্বলতা দিতে পারে। 

এ সময় হবু মায়ের দিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে, প্রতিদিনের সুষম খাদ্যের পরিকল্পনা করতে হবে। গর্ভবতী মায়েদের খাদ্য ও পুষ্টি যোগানোর জন্য আমিষ জাতীয় খাবার বেশি খেতে হবে। স্বাভাবিক খাবারের চেয়ে গর্ভাবস্থায় আমিষ জাতীয় খাবারের পরিমাণ বেশি প্রয়োজন হয়। ভ্রুণের সঠিকভাবে বেড়ে ওঠা, স্তন গ্রন্থির বৃদ্ধির জন্য এ সময় আমিষের বেশি প্রয়োজন হয়। তাই দৈনিক ৯০ থেকে ১০০ গ্রাম আমিষ গর্ব অবস্থায় প্রয়োজন। 

আমিষের মূল উৎস হল মাছ, দুধ, ডিম, বাদাম ডাল ও সিমের বিচি ইত্যাদি। গর্ভাবস্থায় লৌহ জাতীয় খাবার খেতে হবে। গর্ব অবস্থায় একজন পূর্ণবয়স্ক লোকের চেয়ে লৌহ জাতীয় খাবার বেশি খেতে হয়। লৌহ অনেক পরিমানে পাওয়া যাবে শুকনো ফল, সবুজ সবজি, কলিজা পালং শাক, কালো কচুশাক, টেংরা মাছ, বিট ,খেজুর, গুড়, সফেদা ও টক ফল সমূহ ইত্যাদিতে। 

আবার গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকায় ফলিক এসিড এবং ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার থাকাটাও জরুরী। ফলিক এসিডের অভাবে গর্ভবতী মায়েদের রক্তস্বল্পতা হতে পারে, আবার ক্যালসিয়ামের অভাবে নবজাতকের দাঁত গঠনের সমস্যা দেখা দিতে পারে তাই গর্ভকালীন সময়ে মায়েদের প্রচুর পরিমাণে ফলিক এসিড যুক্ত ও ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার খাওয়া দরকার।

গর্ভবতী মায়ের যত্ন ও পরামর্শ

মা শুধু পৃথিবীর অন্যতম ডাক বা অনুভূতি নয়, একজন মায়ের কাছে সবচেয়ে বড় সার্থকতা, কিন্তু যখন একজন মা প্রথম গর্ভধারণ করেন তখন তার অনেকটাই অজানা থেকে যায় , তাই সন্তান গর্ভে ধারণ থেকে শুরু করে সন্তান ভূমিষ্ঠ না হওয়া পর্যন্ত একজন মাকে অনেক সতর্কতা ও সচেতনতা অবলম্বন করে চলতে হয়। চলুন গর্ভবতী মায়ের নিরাপত্তা সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জেনে নেওয়া যাক। গর্ভকালীন সময়ে একজন নারীকে যে স্বাস্থ্য সেবা দেওয়া হয় তাকেই আমরা গর্ভকালীন সেবা বলি। 
গর্ভধারণের সময় হতে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়া পর্যন্ত সময়কালে মা ও শিশুর যত্ন কে গর্ভকালীন যত্ন বলে। এই গর্ভকালীন যত্নের মধ্যে হল গর্ভকালীন সময়ে শিশু সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা এবং গর্ভজনিত কোন সমস্যা প্রতিরোধ করা বা চিকিৎসা করা। এক কথায় মায়ের স্বাস্থ্যের কোন অবনতি না ঘটিয়ে একটি সুন্দর শিশু উপহার দেওয়া।

গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের সতর্কতা

গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের সর্তকতা সম্পর্কে আমাদের জানা খুব দরকার। আমরা এখন আলোচনা করতে যাচ্ছি গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের সতর্কতা সম্পর্কে। চলুন জেনে নেই কিভাবে সতর্কতা অবলম্বন করা যায়।
  • একবার পরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়ে গেলে এরপর থেকে সাবধানে চলাফেরা করুন। অ্যালকোহল, ক্যাফেইন, ধূমপান থেকে দূরে থাকুন। তা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ যেমনই হোক না কেন। কারন এই সময় এই জিনিসগুলো বাচ্চাদের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
  • সন্তান প্রসব পর্যন্ত গর্ভকাল নয় মাসের হয়। এই নয় মাস কে চিকিৎসকরা তিনটি মাস করে ভাগ করে থাকেন। যার প্রতি ভাগে আছে তিন মাস করে।
  • গর্ভবতী হওয়ার শেষ মাসিকের দিন থেকে প্রথম তিন মাস গণনা করা হয়। আর এই তিন মাস ১২ সপ্তাহ হিসেবে ধরা হয়।
  • কোন কোন সন্তান সম্ভবা নারীর বেলায় প্রথম তিন মাসে মধ্যে বমি ভাব দেখা দিতে পারে।
  • এছাড়াও হরমোন ঘটিত পরিবর্তনের কারণে এ সময় ধীরে ধীরে স্তনের আকারের পরিবর্তন হওয়া শুরু হয় । এ সময় স্তন ব্যথা অনুভূত হবে নরম হয়ে যাবে। এগুলো হলে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আপনাকে মনে রাখতে হবে এই পরিবর্তন আপনার জন্য খুব জরুরী।
  • এ সময় সন্তান গর্ভধারণ করার ফলে শারীরিক কিছু পরিবর্তন হতে পারে। যেহেতু সন্তান জরায়ুতে ধারণ করা হয় ও জরায়ুর অবস্থান থাকে প্রসাব নারীর উপরে তাই বাচ্চার বৃদ্ধির সাথে সাথে জরায়ু প্রসাবের নারীর উপরে কিছুটা চাপ ফেলে। এই কারণে প্রসাবের পরিমাণটা বেড়ে যায়। এই সমস্যা বিশেষ করে প্রথম তিন মাস এবং শেষের তিন মাস দেখা দেয়।
  • গর্ভাবস্থায় ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন ঔষধ খাবেন না। যে কোন ঔষধ খাওয়ার ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন। এমনকি গ্যাসের সমস্যা মাথা ব্যাথা বা জ্বর হলেও ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ঔষধখাওয়া যাবে না। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ঔষধখেলে বাচ্চার ক্ষতি হতো পারে।
  • এ সময় আপনাকে প্রচুর পরিমাণে ঘুমাতে হবে তাই ঘুমের পরিমাণটা বাড়িয়ে দিন। দিনে প্রায় আপনাকে আট থেকে দশ ঘণ্টা ঘুমাতে হবে। দিনে কাজের ফাঁকে ফাঁকে আপনাকে অবশ্যই বিশ্রাম নিতে হবে।

গর্ভাবস্থায় কি কি কাজ করা নিষেধ

এখন আমরা আলোচনা করব গর্ভাবস্থায় কি কি কাজ করা নিষেধ। কি কাজ থেকে আপনি এড়িয়ে যাবেন। গর্ব অবস্থায় মেয়েদের টেনশন -মুক্ত এবং হাসিখুশি থাকাটা খুব জরুরী। গর্ভাবস্থায় ভারি কোন কিছু বহন করতে পারবেন না। বাসার কোন ভারী আসবাবপত্র একস্থান থেকে অন্য স্থানে সরানোর কাজও করা যাবে না। বাসার পর্দা পাল্টানো বা ফ্যান পরিষ্কার করার মত কাজও করবেন না।

লেখকের মন্তব্য

পরিশেষে বলা যায় এই আর্টিকেলে আমি গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা সম্পর্কে বিশদ আলোচনা করেছি। গর্ভবতী মায়েদেরকে কি খাবার খাওয়াতে হবে। কি খাবার খেলে ভালো পুষ্টি পাবে। মায়ের গর্ভে বাচ্চা ভালোভাবে বিকশিত হবে। ওজন বৃদ্ধি পাবে। এসব বিষয়ে এই আর্টিকেলে আপনাদেরকে জানানোর চেষ্টা করেছি। যদি আমার এই লেখা ভালো লেগে থাকে আপনার প্রিয়জনদের মাঝে শেয়ার করতে পারেন। লিখার মধ্যে কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url